মাতারবাড়ী প্রকল্প নিয়ে তিন সংগঠনের গবেষণাপত্রে দাবি
কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক মাতারবাড়ী-১ ও মাতারবাড়ী-২ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যে স্থানীয় জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষতি করছে বলে দাবি করা হয়েছে পরিবেশকেন্দ্রিক দেশি-বিদেশি তিন সংগঠনের গবেষণায়। তাদের এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে- বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি নির্মাণ হলে তার দূষণে প্রায় ৬ হাজার ৭০০ মানুষের অকাল মৃত্যু হবে। হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হবেন স্থানীয়রা। এসব থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে বায়ু ও সৌর বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দিকে যেতে হবে বলে মনে করেন গবেষকরা। জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে তারা এসব তুলে ধরেন।
‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে জ্বালানি উৎপাদন পরিকল্পনা : সম্ভাব্য কার্বন বিপর্যয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনটি বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা), মার্কেট ফোর্সেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ যৌথভাবে আয়োজন করে। এতে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মার্কেট ফোর্সেসের নির্বাহী পরিচালক জুলিয়ান ভিনসেন্ট। তিনি তার গবেষণাপত্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোতে অর্থায়ন করছে জাপানি কোম্পানি। অথচ ২০২১ সালে জাপান জি-সেভেন সম্মেলনে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থায়ন না করার অঙ্গীকার করেছিল। অর্থাৎ মাতারবাড়ী-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে অর্থায়ন করে দেশটি নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। আর এ প্রকল্পের কারণে
স্থানীয়রা জীবিকা হারিয়েছেন।’
জুলিয়ান ভিনসেন্ট বলেন, ‘জলবায়ুর ওপর চট্টগ্রামের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোর প্রভাব হবে ভয়ঙ্কর। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমপরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরিত হবে। এগুলোর ধ্বাংসাত্মক প্রভাব এতটাই ব্যাপক হবে যে, তা বাংলাদেশের পাঁচ বছরের বেশি জাতীয় নির্গমনের সমান।’
গবেষণাপত্রে বলা হয়, ২০৩০ সালে নাগাদ এলএনজি আমদানি করতে বাংলাদেশের বার্ষিক খরচ প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে। এলএনজি থেকে প্রতি গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হবে গড়ে ৯৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে দেশের অর্থনীতি বেশি দামে আমদানি করা জ্বালানিনির্ভর হয়ে পড়বে। আপাতত বিদেশি কোম্পানিগুলো এসব খরচ করলেও পরিশেষে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে দেশের সাধারণ জনগণকেই।