পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার দেশে ফিরে আসতে চান। গতকাল সোমবার মেডিক্যাল চেকআপের পর কলকাতার ইডি কার্যালয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি দেশে ফিরতে চাই।
দেশের চার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করে পলাতক হয়েছিলেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদার। গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের অশোকনগর এলাকা থেকে ৫ সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
গতকাল সকালে ইডির আঞ্চলিক দপ্তর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় পিকে হালদারকে। হেফাজতে থাকা আসামিদের প্রতি ২৪ ঘণ্টায় চেকআপ
করা বাধ্যতামূলক। এর আগে রবিবার পিকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন কলকাতার একটি আদালত। ইডির তদন্ত কর্মকর্তাদের জেরার মুখে দফায় দফায় কান্নায় ভেঙে পড়েন পিকে হালদার।
বিআইএফইউর সহযোগিতা নেবে দুদক পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে বৈঠক করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। গতকালের এ বৈঠকে পিকে হালদারকে ফিরিয়ে আনা, ভারতে থাকা তার সম্পদের তথ্যসহ দেশটির আদালত ও রিমান্ডে দেওয়া তথ্য পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআইএফইউ ও ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। পিকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুদক ৩৫টি মামলা করেছে। দুদকের অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পরই তিনি পালিয়ে যান। এখন গ্রেপ্তারের পর তার ভারতে বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অনেক টাকার সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ভারতে তিনি রিমান্ডে ও আদালতে ঋণ জালিয়াতির বিষয় নিয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন। কারা তাকে ঋণ জালিয়াতি করতে সহযোগিতা করেছে এসব তথ্য আমাদের প্রয়োজন। এসব তথ্য পেলে অনুসন্ধান-তদন্তে কাজে লাগাতে পারব।
এ বিষয়ে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, আগে জারি করা রেড অ্যালার্ট নোটিশ ও দুদকের করা মামলার সূত্রে ঢাকায় অবস্থিত ইন্টারপোল থেকে দিল্লিতে অবস্থিত ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরোতে (এনসিবি) আসামিদের ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণে ইলেকট্রনিক বার্তা পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আসামিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে দুদক শিগগিরই আরও কিছু কার্যক্রম নেবে। ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাসে চিঠি দেওয়া ও যোগাযোগ করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে। ভারতে পাচার করা অর্থ ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহে বিআইএফইউ বরাবর পুনরায় চিঠি দেওয়া হবে।
ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং অপরাধে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুদক ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি একটি মামলা করে। এরপর তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। বাংলাদেশের আবেদনে ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে রেড অ্যালার্ট জারি করে।
ভারতকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত : হাইকোর্ট কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েক ঘন্টা আগে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান পিকে হালদার। এখন তাকে গ্রেপ্তার করায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক পিকের গ্রেপ্তারের বিষয়টি বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চের নজরে আনলে আদালত এই মন্তব্য করেন।
আদালত আরও বলেন, আমাদের মেসেজ ক্লিয়ার। দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অপরাধের বিরুদ্ধে আমারা জিরো টলারেন্স। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে যেই হোক। আমরা এ ব্যাপারে সিরিয়াস।
পিকে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের এমডি ছিলেন। এর দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ পিকে হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেন। এর আগেই পিকে হালদার পালিয়ে যান।
এরপর ওই বছরের ১৯ নভেম্বরে তাকে দেশে ফেরাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট পাসপোর্ট জব্দ থাকার পরও পিকে হালদার কিভাবে বিদেশে পালিয়ে গেলেন তা জানতে চেয়ে নতুন আদেশ দেন।
পরে পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওই বেঞ্চে নিয়োজিত ডিএজি আমিন উদ্দিন মানিক জানান, পিকে হালদারসহ ২৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর দুদক ডাকযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশকে চিঠি দেয়। ইমিগ্রেশনের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই চিঠি তারা পান পরদিন বিকাল সাড়ে ৪টায়। এরপর সব বন্দরে নিষেধাজ্ঞার আদেশ যখন পৌঁছায় তখন বাজে বিকাল ৫টা ৪৭ মিনিট। নিষেধাজ্ঞা জারির প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই বিকাল ৩টা ৩৮ মিনিটে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পিকে হালদার দেশত্যাগ করেন।