দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে তিন শতাধিক নৌকা ও ২০টি বাঁশের ভেলায় বসে জাল ফেলে সেই ডিম আহরণ করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। গত রবিবার রাত ৩টায় বৃষ্টি হলে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়তে শুরু করে। পরে গতকাল সোমবার ভোরে বিভিন্ন স্থানে নমুনার চেয়ে একটু বেশিই ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এ ছাড়াও জোয়ারের সময় শনিবার রাত সাড়ে ১১টা, ভাটার সময় শেষ রাত ৩টার দিকে এবং রবিবার দুপুরে নদীর বেশকিছু এলাকায় নমুনা ডিম পাওয়া গেছে। তবে এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংগ্রহকারী ও হালদা বিশেষজ্ঞরা। প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম না পাওয়ার কারণ হিসেবে ডিম ছাড়ার
বিশেষ স্থান নদীর কুম (গভীর এলাকা) ভরাটকে দায়ী করছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী। ডিম সংগ্রহকারীদেরও দাবি, নদীর অঙ্কুরিঘোনা থেকে রামদাশহাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে এসব কুম। কিন্তু নদীর পাড় রক্ষা ও ভাঙন রোধ করতে গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এসব কুমে জিও ব্যাগ ফেলায় অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। ফলে প্রজনন মৌসুমে কুমগুলোতে কমে গেছে পানির স্রোত। যে কারণে মা মাছ এখানে ডিম ছাড়েনি। অন্যদিকে বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি বলে দাবি হালদা বিশেষজ্ঞ ও উপজেলা প্রশাসনের।
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, তারা ২৫০ গ্রাম থেকে আধাকেজি পর্যন্ত নমুনা ডিম পেয়েছেন। বেশকিছু স্থানে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশের নমুনা ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে হাটহাজারীর রামদাস মুন্সিরহাট, মাছুয়াঘোনা, নাপিতের ঘাট, আমতুয়া, নয়াহাট, রাউজানের আজিমের ঘাট, খলিফারঘোনা, ছায়ার চর এলাকায় ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম করে ডিম পাওয়া গেছে। আবার কোথাও কোথাও কয়েক কেজি ডিম পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা। ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, ‘নদীতে পাথর ব্লক ফেলে নদীর কুম ভরাট করে ফেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি।’ ডিম সংগ্রহকারী মুন্সিদাশ বলেন, ‘হতাশা নিয়ে নদী থেকে উঠে যাচ্ছি। ডিম পাইনি, কী করে নৌকা ভাড়া ৭ হাজার টাকাসহ খরচ পুষাবো বুঝতে পারছি না।’ হালদা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের পাথর ব্লকই কাল হয়েছে বলে দাবি তার।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, ‘সোমবার ভোরে ও এর আগে শনিবার রাতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। হালদা নদীর রাউজান অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম সংগ্রহ করেছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘হালদা নদীর মা মাছ ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় আমরা মাঠে ছিলাম। এর পরও প্রত্যাশিত ডিম পাওয়া যায়নি। বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত না থাকায় ডিম কম পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।’ চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি- পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর কুমগুলো ভরাট করে ফেলছে। হালদা নদীর ডিম দেওয়ার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে। মিটিংয়ে তাদের দায় করলেও তারা বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি, আশা করি এ বিষয়ে উনারা একটি সমাধান করবেন।’
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘মা মাছ ডিম ছেড়েছে সোমবার ভোরে। এ বছর হালদা রক্ষায় ভূমিকা থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি। নদীর পরিবেশ, পানির মান সব ঠিক থাকলেও শুধু একটি সমস্যা সেটি হচ্ছে বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত। বৃষ্টি না হওয়ায় পাহাড়ি ঢল সৃষ্টি হয়নি। এ কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি। কেউ এক কেজি, কেউ দুই কেজি বা তার চেয়ে বেশি ডিম পেয়েছেন। তবে অন্যান্যবার কয়েক বালতি পাওয়া যেত। সে হিসাবে অনেক কম। তার পরও চলতি জোসহ আগামী জো-তে বৃষ্টিপাত হলে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়বে বলে আশা করছি।’