৫৪ উপজেলায় ৯১ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত
হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, পক্ষাঘাত, অন্ধত্বসহ নানা জটিল রোগের জন্য উচ্চরক্তচাপ অন্যতম ঝুঁঁকিপূর্ণ উপাদান। এনসিডি (অসংক্রামক রোগ) রিস্ক ফ্যাক্টর সার্ভে (স্টেপস ২০১৮) অনুসারে, দেশে বর্তমানে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন। যা দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২১ শতাংশ। দেশের ৫৪টি উপজেলায় পরিচালিত এক জরিপে, ৯১ হাজার ৬৯১ জন উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর বাইরেও এখনো বিপুল সংখ্যক মানুষ রয়েছেন, যারা তাদের রক্তচাপ সম্পর্কে অবগত নন। উচ্চরক্তচাপে আক্রান্তদের মধ্যে ২৫.২ শতাংশ শহরে এবং ১৯.৮ শতাংশ মানুষের বসবাস গ্রামে। আক্রান্তদের মধ্যে নারী ২৪.১ শতাংশ এবং পুরুষ ১৭.৯ শতাংশ। বাংলাদেশে ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে উচ্চরক্তচাপে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে উচ্চরক্তচাপ দিবস। দিনটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’।
বিশেষজ্ঞরা উচ্চরক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলে
চিহ্নিত করেছেন। কারণ এই অসুখের দৃশ্যমান কোনো লক্ষণ থাকে না। ফলে কারও উচ্চরক্তচাপ থাকলেও, তিনি পরিমাপ না করলে জানা সম্ভব নয় আক্রান্ত কিনা। উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভালো কৌশল রক্তচাপ নির্ণয়। পরিমাপ করে কারও রক্তচাপ বেশি দেখা গেলে, জীবনাচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। নিয়মিত সেবন করতে হবে ওষুধ।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সিলেট বিভাগ, কিশোরগঞ্জ ও জামালপুর জেলার ৫৪টি উপজেলায় রোগীদের স্ক্রিনিং, নিবন্ধন করা হয়েছে। এসব উপজেলায় এ পর্যন্ত স্ক্রিনিং করা হয়েছে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯০০ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের। এর মধ্যে ৯১ হাজার ৬৯১ জনের উচ্চরক্তচাপ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তকৃত রোগীদের নিবন্ধনের আওতায় এনে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ৫৪ উপজেলায় রোগীদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে ওষুধ বিতরণ, কোথায় কী পরিমাণ ওষুধ প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ জন্য বেশ কিছু অ্যাপ তৈরি ও ব্যবহার করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ২০০ উপজেলায় ডিজিটাল প্রযুক্তির এই ব্যবহার বিস্তৃত করা হবে। যার মাধ্যমে আরও অনেক রোগী উপকৃত হবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সূত্রে জানা গেছে, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত প্যানেল উচ্চরক্তচাপ চিকিৎসায় একটি জাতীয় প্রটোকল এবং একাধিক ওষুধের সমন্বয়ে একটি কার্যকরী ডোজ নির্ধারণ করেছেন। এই প্রটোকল অনুসারে দেশের ২০০টি উপজেলা হাসপাতালের এনসিডি কর্নার থেকে বিনামূল্যে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৮০টি উপজেলায় ওষুধ বিতরণের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগীদের তথ্য সংগ্রহ, নিবন্ধন ও ফলোআপ করা হচ্ছে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান বলেন, সাধারণত মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ঘাড় ব্যথা, বুকে চাপ অনুভূত হওয়া ইত্যাদি উচ্চরক্তচাপের লক্ষণ। উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ব্রেইন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর এবং কিডনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। উচ্চরক্তচপ নিয়ন্ত্রণে শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পাশাপাশি কর্মতৎপর থকতে হবে শারীরিকভাবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য যেমন শাকসবজি-ফলমূল বেশি খেতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া, পাতে লবণ খাওয়া যাবে না। তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি (সিগারেট, জর্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি) এবং মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং নিয়মিত সেবন করতে হবে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ।
দিবসটি উপলক্ষে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আয়োজনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, পরিচালক অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রধান অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. ফজলে এলাহি, প্রাক্তন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল ফয়েজ, ঢামেক হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আরেকটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।