দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতনের ঘটনা ঘটেছে। এক দিনে সূচকের পতন প্রায় দুই শতাংশ। ৩৮১টি কোম্পানির মধ্যে ৩৪৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কারেন্সি (মুদ্রাবাজারে) মার্কেটে অস্থিরতা চলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারসাম্যহীন (ঘাটতি বাড়ছে), রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ব্যাংকের অর্থ ফেরত দেওয়ার চাপে বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। দরপতনের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বাজারে দরপতন ধসে রূপ নেয়।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী আমাদের সময়কে বলেন, দুই কারণে বাজারে বড় দরপতনের ঘটনা ঘটেছে। ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকেই বড় অঙ্কের অর্থ নিয়েছে আইসিবি। এখন টাকা ফেরত দিতে শেয়ার বিক্রির একটা চাপ রয়েছে। যার খবরে সাধারণ বিনিয়োগকারী আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করেছে। ফলে বাজারে বড় দরপতনের ঘটনা ঘটেছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম আমাদের সময়কে বলেন, বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কাজ করছে কমিশন। আশা করি আজ থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমতে থাকে। দিনের শুরুতে দেখা দেওয়া পতনের ধারা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। এমনকি লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের মাত্রা। লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪৩০ পয়েন্টে নেমেছে। ফলে টানা চার দিন দরপতনের ঘটনা ঘটল শেয়ারবাজারে। এমন টানা পতনের কারণে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি গত বছরের ২ আগস্টের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত
ডিএসই-৩০ সূচক ৪০ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪১০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৮২৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২০০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৬০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪৩ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আরডি ফুস, ফু-ওয়াং সিরামিক, এনআরবিসি ব্যাংক, ওরিয়ন ফার্মা, স্যালভো কেমিক্যাল, এসিআই ফরমুলেশন এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৮২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ৩০৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬৬টির এবং ৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।