বিশেষ স্কিমের মাধ্যমে সরকার বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর তিনি এ কথা জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দেবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স নিয়ে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ মিলবে। এটি বাজেটে পাবেন, বাজেটে থাকবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যা করছে তা বাজেটের আগেই করছে।
যারা অর্থ পাচার করেছে, ট্যাক্স দিয়ে রেকর্ডে নাম লেখাতে চাইবেন কি না- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে তো এ সুযোগ অনেকে নিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া যখন এমন একটি অ্যামনেস্টি ঘোষণা করল, তখন অনেক টাকা বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এখান থেকে যারা টাকা নিয়ে গেছেন, এ সুযোগটি তাদের জন্য অত্যন্ত ভালো হবে। তারা কাজে লাগাবেন। সব দিক থেকে আমাদের চেষ্টা করতে হবে।
বিদেশ থেকে পাঁচ হাজারের বেশি ডলার পাঠানোর ক্ষেত্রেও কোনো ডকুমেন্টস লাগবে না, এতে বিদেশ থেকে কালো টাকা আসবে কিনা এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাইছি, বিভিন্ন সময়ে যেসব কালোটাকা বিদেশে থেকে গেছে, বিভিন্ন সোর্স থেকে তা জানতে পারি। অনেক সময় বলা হয়, বিদেশে যারা টাকা নিয়ে গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? বিদেশে যে টাকা চলে গেছে, আমরা বলেছি যেন টাকাগুলো দেশে ফেরত আসে।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বাজেটের আগেই আমরা এটা করার চেষ্টা করছি। নিজেরাও চিন্তাভাবনা করছি। এ ধরনের একটি উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেটি আমরা জানি। সংসদে বাজেট উত্থাপিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে বলতে চাই না। যখন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, যেসব টাকা বিভিন্ন চ্যানেলে চলে গেছে, সেগুলো ফেরত আনার জন্য এ উদ্যোগ। এ ধরনের অ্যামনেস্টি (সাধারণ ক্ষমা) বিভিন্ন দেশ দিয়ে থাকে। তবে কত টাকা গেছে, সেটির ধারণা দিতে পারব না।
ডলার সংকটের জন্য এ সিদ্ধান্ত কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই ডলার ক্রাইসিসের জন্য। ডলার আমাদের দরকার। তবে যে ক্রাইসিস বুঝিয়েছে সেটি নেই, আমাদের ফরেন রিজার্ভ ভালো। এখনো ফরেন রিজার্ভে আশপাশের দেশের তুলনায় অনেক স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। এ ধরনের ক্রাইসিস আগেও লক্ষ্য করেছি। ২০০১ সালে সেটি আমরা দেখেছি।
নতুন বাজেটে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকছে কি না- সে প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ছোট, মাঝারি, বড় সব ব্যবসায়ীকে আগামী বাজেটে সুবিধা দেওয়া হবে। কেননা আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সে জন্য সবাইকে সমান সুযোগ-সুবিধা দেব।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট নিয়ে এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ডলার আমাদের প্রয়োজন আছে, কিন্তু যেভাবে ডলার সংকটের কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে। আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। এর আগেও আমরা সংকট মোকাবিলা করেছি। ইনশাআল্লাহ এবারও সফলভাবে করতে পারব।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বলেছে, এ মুহূর্তে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তা হবে আত্মঘাতী। আপনি কী মনে করেন- এক সাংবাদিকের করা এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরাও বুঝি, তবে আমরা চাই যেন কোনো ধরনের প্রভাব না পড়ে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, দাম বাড়লে কারও না কারও ওপর এর প্রভাব পড়ে। তবে এ ইমপ্যাক্ট যেন কম হয়, সেজন্যই কনজ্যুমারদের সঙ্গে শেয়ার করে নিচ্ছি। সারা বিশ্বেই ‘আপস এন্ড ডাউন’ পরিস্থিতি চলমান জানিয়ে কামাল বলেন, আগামী বাজেটের মাধ্যমে আমাদের মূল কাজ হবে বিভিন্ন পলিসির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা এবং একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা। এ দুটি নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, যুক্তরাজ্যেও ৩৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনামসহ সবারই একই অবস্থা। আমরা চেষ্টা করছি, দেশের মানুষ যাতে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্যই ঈদে এক কোটি পরিবারকে ডাল, তেল, চিনি কম মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।