প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণমানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিজেদের অর্থায়নে করতে পেরেছি। এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হবে না। কারো কাছে হাত পেতে চলবে না। ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে।
গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে ক্ষমতসীন দল আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ। আলোচনায় আরও অংশ নেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির সাত মাসের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে একটি বৈরী মনোভাব দেখা যায়। বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টাসহ আর্থসামাজিভাবে আমাদের শোষণ, নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জনগণের দল আওয়ামী লীগ সব সময়ই এ দেশের শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এই সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। কত পরিবার কষ্ট পেয়েছে! কত মানুষ আত্মত্যাগ করেছে!
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২৩ বছরের সংগ্রাম ও জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বাংলাদেশ নামটিও বঙ্গবন্ধুর দেওয়া। দলটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে
তোলার জন্য ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। আর স্বাধীন বাংলাদেশে কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নামের সঙ্গে স্বাধীনতা ও অধিকার জড়িত। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এবং একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত হয়ে সংবিধান দিয়েছিলেন জাতির পিতা। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দেয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আমরা কেবল জাতির পিতাকে হারাইনি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনাকেও হারিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি হয়েছিল। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয়বার সরকারে আসে। সরকারে আসার পর আজ বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে।
সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ২১০০ সালের ডেল্টাপ্লান করে দিয়েছি। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ যাতে হয়, সেই পরিকল্পনাও তৈরি করে দিয়েছি। এই ধারাবাহিকতা নিয়ে দেশ চলতে থাকলে তাহলে এ দেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে আমি ফিরে এসেছিলাম। আওয়ামী লীগ আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করেছিল। পাশাপাশি জনগণের আশ্রয়েই আমি এসেছিলাম। তাদের মাঝে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম হারানো বাবা-মায়ের স্নেহ; হারানো ভায়ের স্নেহ। কাজেই এ দেশের মানুষের জন্য যে কোনো আত্মত্যাগে আমি সবসময় প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলা ভাষায় কথা বলা, আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ অর্থ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন স্মৃতির কথা তুলে ধরে বলেন, আজ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দলটির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তাদের শ্রদ্ধা জানাই। বঙ্গবন্ধু একটি লক্ষ্যে যাওয়ার জন্য রাজনীতি করেছেন। দেশকে স্বাধীন করেছেন। তিনি ফাঁসিকাষ্ঠে গিয়ে বলেছেন, বাঙালিদের দমিয়ে রাখা যাবে না। আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ এক অনন্য নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাদের মাঝে ফিরে না আসতেন, তাহলে আজ পদ্মা সেতু পেতাম না। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেখ হাসিনার মাধ্যমেই করা সম্ভব হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দলের ইতিহাস তুলে ধরে আমির হোসেন আমু বলেন, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে এ দেশে পুনর্বাসিত করেছে বিএনপি। তারা এ দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের অর্থায়নে আজ পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে। এই সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। এতে বোঝা যায়, বাংলাদেশ আজ কারো মুখাপেক্ষী নয়। আর এটাই প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা।