রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নবাব আব্দুল লতিফ হলের আবাসিক ছাত্র মুন্না ইসলামকে মধ্যরাতে মারধর করে কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন।
ভুক্তভোগী মুন্না ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
অভিযুক্তরা হলেন নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হাসান জয় ও ছাত্রলীগ কর্মী তওহীদ।
হল সূত্র ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুন্না ইসলাম গত ৫ মাস ধরে নবাব আব্দুল লতিফ হলের ২৪৮ নম্বর রুমে অবস্থা করছিলেন। হঠাৎ গত রাত ২টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী গিয়ে সেই রুমে ওঠার কারণ জানতে চান। হলের বৈধ আইডি কার্ড দেখালেও তারা কোনো কথা না শুনে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। একপর্যায়ে রুম থেকে জোর করে তার বেড ও জিনিসপত্র ফেলে দেন। এমন অবস্থায়ও মুন্না রুম থেকে বের না হলে ছাত্রলীগকর্মী পারভেজ ও তওহীদ তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে তার বিছানাপত্র নামিয়ে দিয়ে ওই সিটে মাকছুদুল হাসান আসিফ নামের আরেক শিক্ষার্থীকে তুলে দেন। আসিফ বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ২৩০ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও একজন সহকারী প্রক্টর ২৪৮ নম্বর কক্ষে গিয়ে মুন্নাকে তার সিটে তুলে দেন। এতে বিপাকে পড়েন ২৩০ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আসিফ। ২৪৮ নম্বর থেকেও তাকে বের করে দেওয়া হয় অপর দিকে ২৩০ এর সিটটিও ছাত্রলীগের দখলে। সে বিষয়টি হল প্রাধ্যক্ষকে জানালে প্রাধ্যক্ষ তাকে ২৩০ নম্বর কক্ষে তার সিটেই থাকতে বলেন।
এদিকে, শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়টি জানাজানি হলে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারা প্রাধ্যক্ষকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। এ সময় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কুদরত-ই-জাহান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মুন্না ইসলাম বলেন, ‘আমি এই হলের ২৪৮ নম্বর রুমের একজন আবাসিক ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রলীগের নেতারা এসে আমাকে সিট থেকে নামিয়ে দেয় এবং মারধর করে। পরে আজ সকালে প্রাধ্যক্ষ স্যার এসে আমাকে আমার সিটে তুলে দেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ কর্মী তওহীদ বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার নামে সব অভিযোগ বানোয়াট।’
নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন বলেন, ‘আসিফের আবাসিকতা আছে কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশ আছে, ১৯-২০ সেশনের কোনো শিক্ষার্থীকে হলে সিট দেওয়া যাবে না। তবুও প্রাধ্যক্ষ মুন্নাকে মানবিক কারণে সিট দিয়েছে। আর আসিফও ১৯-২০ সেশনের। আসিফেরও সমস্যা থাকায় আমরা দুজনকেই বেড শেয়ার করে থাকতে বলি। তবে মারধরের ঘটনা মিথ্যা ও বানোয়াট।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গতকাল রাতে বিষয়টি জানতে পেরে আজ সকালেই আমি হলে এসে মুন্না ও মাকছুদুল নামের দুই শিক্ষার্থীকেই আমরা নিজেদের সিটে তুলে দিয়েছি। মারধরের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাদেরকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্ট দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, গত পাঁচদিন আগেও শামীমের বিরুদ্ধে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে।