যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত দুজন হলেন- গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের মো. আউয়াল (৩০) ও কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধনারচর পশ্চিমপাড়া গ্রামের নুরনবী (২৭)। এ নিয়ে মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
পুলিশের তদন্তকারীরা বলছেন, গ্রেপ্তারকৃত তিনজনই ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে ধর্ষণের কথা স্বীকার করছেন না। তারা ডাকাতদলের অন্য সদস্যদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। পুলিশের তদন্তকারীরা বলছেন, পথে পথে টিকিট ছাড়া যাত্রী উঠানোয় ডাকাতরা বাস ডাকাতির সুযোগ পায়।
গতকাল সকালে গাজীপুরের সোহাগপল্লী ও কালিয়াকৈরের সুত্রাপুুর টান এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর পর দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে শহরের নতুন বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে রাজা মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি উত্তর) ওসি মো. হেলাল উদ্দীন জানান, রিমান্ডে রাজা মিয়াকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছে বাস ডাকাতের চক্র, তারা আরও কোনো ডাকাতি কর্মকা-ে জড়িত কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন রাজা মিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, ডাকাতির সময় লুট করা একটি মোবাইল ফোন নুরনবীর কাছে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া লুট করা মালামাল উদ্ধারে অভিযান চলছে।
এদিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাদিকুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা, তা সোয়াপ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এর আগ ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, ডাকাতি শেষে ছয় ডাকাত তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বাসে আরও এক নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সেই নারীকে তার স্বামী কাউকে না বলে নিয়ে যায়।
মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস প্রায় ২৪ জন যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। গভীর রাতে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানা এলাকায় যাত্রীবেশী একদল ডাকাতের কবলে পড়েন যাত্রীরা। ডাকাতরা যাত্রীদের নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করেন। পরে ধর্ষণও করেন। এ ব্যাপারে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় হেকমত আলী নামে এক যাত্রী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন।
ঈগল পরিবহনের বাসটি চালাচ্ছিলেন মনিরুল ইসলাম। ১৫ বছর ধরে দূরপাল্লার বাস চালান তিনি। কিন্তু কখনো এমন ঘটনার শিকার হননি বলে জানিয়েছেন। তিনি বর্তমানে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় আছেন। সেখানে তার সঙ্গে বাসের সুপারভাইজার রাব্বী হোসেন ও চালকের সহকারী (হেলপার) দুলাল হোসেনও রয়েছেন।
মনিরুল বলেন, ‘বুধবার থেকেই থানায় আছি। পুলিশ বলেছে, আসামি ধরা হবে, তাদের শনাক্ত করার জন্য রাখা হয়েছে। মাঝেমধ্যে ছবি এনে দেখাচ্ছে। তাদের শনাক্ত করছি।’ টিকিট ছাড়া দূরপাল্লার গাড়িতে যাত্রী উঠানো প্রসঙ্গে মনিরুল বললেন, ‘হোটেল বিরতির পর অনেক বাসেই যাত্রী ওঠে। কখনো এমন হয়নি। তবে আমাদের কপাল খারাপ, ব্যাড লাক।’
সেদিন রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রাগপুর থেকে তিনি বাস চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সর্বশেষ নাটোরের কাচিকাটা এলাকা থেকে টিকিটধারী যাত্রী বাসে ওঠেন। সব মিলিয়ে ২৪ জন যাত্রী নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলেন। সিরাজগঞ্জে হোটেল বিরতি শেষে বাস ছাড়ার পর ডাকাতরা তিন দফায় ১০ জন ওঠেন।
মনিরুল ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, ডাকাতরা তাকে বলেন মির্জাপুরে নেমে যাবেন। মাঠের ভেতর গিয়ে দুজন গাড়ি সাইড করতে বলেন। কিন্তু তিনি বাস না থামিয়ে স্ট্যান্ডে নামার কথা বলেন। একপর্যায়ে তারা জোর করতে থাকেন। টেনেহিঁচড়ে মারধর করতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে একজন বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চালাতে থাকেন।
রাত ৩টার দিকে ডাকাতরা বাস থেকে নেমে চলে যান উল্লেখ করে মনিরুল বলেন, ৩টা ৬ মিনিটে তিনি নিজ মুঠোফোন থেকে জরুরি সহযোগিতার জন্য ৯৯৯-এ কল করেন। বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদের সামনে নিয়ে যান। সেখানে এলাকার লোকজন জড়ো হলে কেউ কেউ বাসের স্টাফদের মারধর করার কথা বলেন। এ সময় কৌশলে জীবন বাঁচাতে মনিরুলসহ তিনজন আধা কিলোমিটার দূরে চলে যান।