বাগেরহাটের বিনোদনের একমাত্র কেন্দ্র হিসেবে এক সময় পরিচিত ছিল মনিকা ও লাইট নামের দুটি সিনেমা হল। সেই পাকিস্তান আমল থেকে চলা এই হলগুলো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে প্রায় এক যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে। দুটি হলই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে রিকশা চার্জ ও ভাঙ্গারি রাখার স্থান হিসেবে। সরেজমিন দেখা যায়, আগে ব্যবহৃত সেই হলের পর্দা, চেয়ার, এমনকি হলের দেয়ালে ছবির পোস্টার, লাইট সবই জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে; নেই কোনো কোলাহল, নেই কোনো ডায়ালগ- চারদিকে শুধু সুনসান নীরবতা। বাগেরহাটের বিনোদনপ্রেমী মানুষের আশা, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আবারও এই হলগুলো চালু করা হোক। তাহলেই এখানকার মানুষ সুস্থধারার বিনোদন ফিরে পাবে।
লাইট হলের সেই সময়ের টিকিট বিক্রেতা ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘আমার মতো আরও ৮-১০ জন একসঙ্গে টিকিট বিক্রি করতাম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হলের রাস্তা দিয়ে মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে হাঁটতে পারতাম না। এখন সিনেমা হল বন্ধ থাকায় অনেকে বিকল্প পেশায় ঢুুকে পড়েছে।’
হলের সামনের দোকানদার আবু তালেব বাচ্চু বলেন, ‘আগে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসত এখানে সিনেমা দেখতে। ছবি দেখে অনেকে আবেগে কান্না করত, আবার অনেকে ভিলেনকে গালমন্দ করতে করতে হল থেকে বের হতো।’
বাগেরহাট থিয়েটারের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আজমল হোসেন বলেন, ‘বাগেরহাটবাসীর বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল সিনেমা হল; কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এগুলো বন্ধ রয়েছে। সরকার যদি অনুদানের মাধ্যমে এই হলগুলো আবার খোলার ব্যবস্থা করে- তা হলে এই অঞ্চলের মানুষ আবার সিনেমা দেখার সুযোগ পাবে।’
বাগেরহাট গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি সৈয়দ শওকত হোসেন বলেন, ‘সিনেমা হলগুলোকে আবার চালু করতে হবে। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ ব্যক্তিপর্যায়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বাগেরহাট মনিকা সিনেমা হলের স্বত্বাধিকারী মল্লিক মইনুল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এই হল বন্ধ রয়েছে। আমাদের যদি সরকার অনুদান দেয়- তা হলে পুনরায় এই হলগুলো চালু করতে পারব। এর মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান হবে।’
বাগেরহাটের বিভিন্ন জায়গায় চিত্রধারণকৃত, বাগেরহাটের স্থানীয় ভাষা এবং এখানকার একটি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা ‘সাহস’-এর নায়ক মোস্তাফিজুর নুর ইমরান দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, “আমি বাগেরহাটের মানুষ, এখানে কোনো হল না থাকায় ‘সাহস’ করার পরও এখানকার মানুষকে ছবিটি দেখাতে পারিনি। আমি মনে করি, বাগেরহাটে একটি সিনেপ্লেক্স তৈরি করা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ে কারও এগিয়ে আশা দরকার। তা হলে আবার মানুষ সিনেমা হলে আসবে এবং ভালো ভালো ছবি দেখতে পাবে।”