শাল সহায়ক বৃক্ষরাজিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে গাজীপুরের ভাওয়ালের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বন বিভাগের উদ্যোগে শাল সহায়ক বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ রোপণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সৃজিত বাগানগুলো এখন জানান দিচ্ছে মাথা উঁচু করে। সঠিক পরিচর্যা ও দেখভালের ফলে দেশি বিরল এবং বিপন্ন প্রজাতির গাছ ১৫-২০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছে। বনের ইকোসিস্টেম রক্ষাসহ ভাওয়াল বন বন্য পশুপাখির আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বন বিভাগ। ঢাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ নজরদারি করছে বন বিভাগের এসব এলাকা।
ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে সুফল প্রকল্পের অধীন রেঞ্জটির ভবানীপুুুর বিট, বারইপাড়া বিট ও রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিটে ৮ হেক্টর বনে এনরিচমেন্ট বাগান সৃজন করা হয়েছে। দ্রুত বর্ধনশীল মিশ্র প্রজাতির গাছপালা দিয়ে ভবানীপুর বিটে বাগান সৃজন করা হয়েছে ১০ হেক্টর। এ ছাড়াও কম্পোস্ট সারের মাধ্যমে ৫ হেক্টর বনে শাল কপিচ ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রেঞ্জটির বিভিন্ন বিটে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির চারাগাছ রোপণের মাধ্যমে বাগান সৃজন করা হয়েছে ৫ হেক্টর বনে।
স্থানীয়দের ভাষ্য- গাজীপুরের ভাওয়াল শালবাগানে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সমাহার ছিল। তবে শিল্পায়ন, জবরদখল ও মানুষের অত্যাচারে বিভিন্ন প্রজাতির শালসহায়ক গাছপালা বিনষ্ট হয়ে পড়ে। দুই বছর আগেও ভাওয়ালের বাগানে শুধু শাল গাছ চোখে পড়ত। বনের ঘনত্বও ছিল কম। তবে বন বিভাগের উদ্যোগে এখন অনেকটাই সমৃদ্ধ হচ্ছে এই বন। শাল সহায়ক বৃক্ষরাজিতে এখন ঘনত্ব বেড়েছে বনের।
বনবিভাগের তথ্য মতে, সারি সারি শাল গাছের ফাঁকে ফাঁকে চালতা, বেল, আমলকী, হরীতকী, ছাতিয়ান, বিলাতিগাব, বহেরা, অর্জুন, চিকরাশি, মহুয়াসহ রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির শাল সহায়ক চারা। রোপণ করা হয়েছে প্রায় ৩০ প্রজাতির গাছ। কঠোর নজরদারি ও যতেœ এখন চারাগুলো দৃশ্যমান। গাছগুলো বনের প্রাণীর আহারের জোগানও দেবে।
ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা জানান, শিল্পঅধ্যুষিত গাজীপুরে বনে বাগান সৃজন ও রক্ষণাবেক্ষণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও চলমান তীব্র দাবদাহে চারাগাছ রক্ষণাবেক্ষণ খুবই কঠিন। এর ওপর প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে বনে অগ্নিকা-ের ঘটনা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এতসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ভাওয়াল বনে সুফল প্রকল্পের অধীন প্রতিটি বাগান সমৃদ্ধ করা হয়েছে। বন যাতে তার পূর্বের অবস্থায় ফেরে সে জন্য বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিশেষ নজরে রেখেছেন বনাঞ্চলের এই এলাকা।
বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোবিন্দ রায় বলেন, শাল সহায়ক দেশি প্রজাতির নানা ধরনের গাছপালা পুনপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতেই সরকার সারাদেশে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আমরা এ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির দেশি গাছপালা রোপণ করেছি। আশা করছি পশু-পাখির অন্যতম আবাসস্থল হবে এই বন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জাতিসংঘের নির্দেশনা মেনে আমরা অব্যাহত রেখেছি বিভিন্ন প্রচেষ্টা। এর সুফল পাওয়া গেছে ইতোমধ্যে।