পদ-পদবীর লালসা, নারী কেলেঙ্কারী, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তুলে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে কার্যত সৈয়দপুর জাতীয় পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি দলের একটি অংশ সংবাদ সম্মেলন করে নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার পর থেকেই গৃহদাহে পুড়ছে সৈয়দপুর জাতীয় পার্টি। আর এতে ভেঙে পড়েছে চেইন অব কমান্ড।
মূলত গত ২১ জুলাই রাতে স্থানীয় দলীয় কার্যালয়ে সৈয়দপুর উপজেলা জাতীয় পাটির একাংশের সভায় নানা অভিযোগ তুলে দলীয় এমপি আহসান আদেলুর রহমান আদেলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এর নেতৃত্ব দেন জাতীয় পার্টি সৈয়দপুর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক দাবিদার শিল্পপতি সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ জুলাই দুপুরে এমপির পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন সদ্য অনুমোদিত জাপার সৈয়দপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. জয়নাল আবেদীন ও পৌর কমিটির আহ্বায়ক মো. সহিদ মিয়া। তারা বলেন, সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক একজন জনবিচ্ছিন্ন অরাজনৈতিক ব্যক্তি ও অবৈধ ব্যবসায়ী। দলে প্রভাব খাটিয়ে তিনি নিজ মালিকানাধীন ইকো হেরিটেজে নারী ব্যবসা করছেন। ফলে নিজ স্বার্থ হাসিলে পদ-পদবীর লালসায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে গত ১৩ জুলাই আদিবা কনভেনশন সেন্টারে বর্ধিত সভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক পদ দাবি করেন তিনি। পরে এমপি আদেলের হস্তক্ষেপে এবং জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের নির্দেশে তাকে উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এর পরও তিনি (সিদ্দিক) দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে কোনো কারণ ছাড়াই অন্যায়ভাবে এমপি আদেলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন, যা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ।
একইদিন রাতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনটির সৈয়দপুর উপজেলা কমিটির আহবায়ক দাবিদার মো. সিদ্দিকুল আলম ও পৌর কমিটির সদস্য সচিব মো. রাকিব খান। তারা বলেন, সরকার সারাদেশে অভিন্ন ও সমান্তরাল উন্নয়নের লক্ষ্যে সৈয়দপুরেও যথাযথ বরাদ্দ প্রদান করেন। অথচ এমপি আদেল যার সিংহভাগ, আবার কোনো ক্ষেত্রে ৫০ ভাগই আত্নসাৎ করেছেন। এতে সৈয়দপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে ছি ছি পড়েছে। আর এর সব দায়ভার আমাদের বহন করতে হচ্ছে। তিনি এ জনপদের কোনো উন্নয়ন চান না। এমনকি দলীয় সভা-সমাবেশেও উপস্থিত থাকেন না। বরং তিনি জাতীয় পার্টিতে ফাটল ধরাতে নানা কুটচাল করছেন। ফলে তাকে (এমপি) উপজেলা ও পৌর কমিটির এক সভায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তারা আরও বলেন, কথিত জাতীয় পার্টির নেতা জয়নাল আবেদীন নিজেই নারী ব্যবসায়ী। তার মালিকানাধীন পাতাকুঁড়ি পার্কে যৌন ব্যবসার কারণে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া একাধিক মামলার পলাতক আসামি কাজী ময়নুল ইসলাম কলেজে নিয়োগ প্রদানের নামে অর্থ এবং সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাতকারী। আমরা এসব প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি। একে অপরের প্রতি বিষোদগার বক্তব্য দেওয়ার কারণে বর্তমানে সৈয়দপুর জাতীয় পার্টির কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। হতাশা দেখা দিয়েছে সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে। তাদের প্রশ্ন সাংসদ আদেল বনাম সিদ্দিকুলের এ বিরোধ কি থামবে; নাকি সামনে তা আরও বাড়বে?
জাপার অভ্যন্তরীণ বিরোধ সম্পর্কে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা বলেন, মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে নীলফামারী-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাপা নেতা আহসান আদেলুর রহমান আদেল। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এখানকার আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেননি।