মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ (২৭ নভেম্বর ১৯০০-২০ আগস্ট ১৯৮৬) ভারত উপমহাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আশির দশকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অবধি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ১৯০০
সালের ২৭ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার তারুটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ জমিদার মহাজনদের বিরুদ্ধে অসহায় দুধ বিক্রেতাদের সংগঠিত করে দুধের ন্যায্যমূল্য প্রদানে তাদের বাধ্য করেন। ১৯১৯ সালে তিনি খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২২ সালে ২২ বছর বয়সে তিনি ব্রিটিশবিরোধী ঐতিহাসিক ‘সলংগা আন্দোলন’-এ নেতৃত্ব দেন। এ জন্য তাকে কারাভোগ করতে হয়। এই ‘সলংগা আন্দোলন’ ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ‘রক্তসিঁড়ি’ নামে পরিচিত।
তর্কবাগীশ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। ১৯৩৮ সালে সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তিনি বাংলা, আসাম ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
মাওলানা তর্কবাগীশ পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাভাষার অধিকার আদায়ে সংগ্রামরত ছাত্র জনতার ওপর পুলিশি নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে প্রাদেশিক পরিষদ থেকে বেরিয়ে এসে মহান ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মুসলীম লীগ ত্যাগ করে প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দল গঠন করেন এবং নুরুল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তান গণপরিষদে ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট তিনিই প্রথম বাংলাভাষায় বক্তৃতা করেন। মাওলানা তর্কবাগীশ ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি নির্মাণে যেসব মনীষী কালজয়ী অবদান রেখেছেন, মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একজন সুসাহিত্যিকও ছিলেন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ শেষ প্রেরিত নবী, সত্যার্থে ভ্রমণে, সমকালীন জীবনবোধ, স্মৃতির সৈকতে আমি প্রভৃতি। জাতীয় ইতিহাসের এ ব্যক্তিত্ব ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট ইন্তেকাল করেন।