advertisement
advertisement
advertisement

ধরাছোঁয়ার বাইরে হুন্ডিকারবারিরা

আহসান হাবিব
৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:০০ এএম | আপডেট: ৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:৩২ এএম
advertisement

দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার এবং বিদেশ থেকে অবৈধভাবে দেশে টাকা ঢুকছে মূলত হুন্ডির মাধ্যমে। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে। এর পাশাপাশি প্রবাসীরা তাদের আয় দেশে পাঠালেও হুন্ডির কারণে তা যোগ হচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারে। বরং প্রযুক্তির সহায়তা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ফাঁকফোকরে দিন দিন আরও ফুলেফেঁপে উঠছে হুন্ডির কারবার।

হুন্ডি একটি নীতিবহির্ভূত ও দেশের নিষিদ্ধ অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর ব্যবস্থা। আগে বাণিজ্যিক লেনদেন ও ঋণ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবহƒত হতো। এখনো হয়। তবে তা অবৈধভাবে ও অবৈধ উদ্দেশ্যে। হুন্ডি ব্যবসা বলতে একটি লিখিত শর্তহীন আদেশÑ যা এক ব্যক্তির নির্দেশ অনুযায়ী অন্য এক ব্যক্তি লিপিবদ্ধ করেন এবং নির্দেশনামায় উল্লেখিত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়। হুন্ডি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ প্রেরণের একটি ব্যক্তিগত পর্যায়ের কৌশল। তা মুঘল আমলে চালু হয়েছে এবং আজও প্রচলিত আছে।

advertisement

আমাদের দেশের প্রবাসীদের আয়ের বড় একটা অংশ যোগ হয় রেমিট্যান্সে। রেমিট্যান্সের মাধ্যমেই আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়। অবশ্য কোনো বছরেই আমরা পুরোপুরি রেমিট্যান্স পাই না। প্রবাসীদের আয়ের অর্থ বা রেমিট্যান্স আসা অনেকটা কমে গেছে। এর কারণ হচ্ছে হুন্ডিব্যবস্থা।

বিদেশ থেকে অবৈধভাবে দেশে টাকা পাঠানো ও দেশ থেকে অর্থ পাচারÑ এ দুটি বিষয়ই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পুরো প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হয় হুন্ডির মাধ্যমে। চাঁদাবাজি, তদবিরে আয় করা অর্থ, ঘুষ বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হয়। এ ছাড়া রপ্তানি মূল্য কম দেখিয়ে এবং আমদানি মূল্য বেশি দেখিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হয় হুন্ডির মাধ্যমে। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে হুন্ডিকারবারিরা।

advertisement

ডলার সংকটের সুযোগ নিয়ে ১৩টি মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠান সরাসরি হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। মানি চেঞ্জার্সের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানগুলো বেআইনিভাবে বেশি দামে নগদ ডলার কিনে সেগুলো মজুদ করছে। এভাবে বাজারে সংকটের মাত্রা বাড়িয়ে লাগামছাড়া দাম বাড়িয়ে ডলার বিক্রি করছে। এ ক্ষেত্রে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে পাসপোর্টে বৈদেশিক মুদ্রা এনডোর্স করেনি। এমনকি ডলার কেনাবেচার কোনো তথ্য রেজিস্টারেও লিপিবদ্ধ করেনি। অর্থাৎ হুন্ডির মাধ্যমে তারা ডলার কিনেছে। একই সঙ্গে হুন্ডির মাধ্যমে বিক্রিও করছে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি করতে হলে হুন্ডি প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনার খরচ কমাতে হবে। রেমিট্যান্সের প্রণোদনার ব্যবস্থাটি চলমান রাখতে হবে। মনিটর আরও জোরদার করতে হবে। শাস্তির বিধানগুলো কার্যকর করতে হবে। রেমিট্যান্সের টাকা যাতে গ্রাহক দ্রুত পেতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ মানুষ হুন্ডিতে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে টাকা দ্রুত পাওয়া। যে কোনো অঞ্চল থেকে মানুষ দ্রুত হুন্ডিতে টাকা পায় বলেই এটি জনপ্রিয় হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে ব্যাংকগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ব্যাংক খাতে রিফর্ম করা উচিত। ব্যাংকগুলোয় যোগসাজশে বা মিলেমিশে দুর্নীতি ও অনিয়মের নজির দেখা যাচ্ছে। তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ব্যাংকের গ্রাহকসেবা বৃদ্ধি করতে হবে। তা হলে ব্যাংকের প্রতি মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠবে। সেবাগুলোকে সাশ্রয়ী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের একটা সুযোগ দিলে হয়তো কালোটাকাগুলো বিনিয়োগে ফিরে আসবে।

প্রবাসীরা অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠালে দেশে তাদের স্বজনরা আইনের আওতায় আসতে পারেন তা গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। যারা বিদেশ থেকে অবৈধ পথে টাকা পাঠাচ্ছেন এবং দেশ থেকে সে টাকা গ্রহণ করছেন, তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মনিটর করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এর পাশাপাশি প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা পেতে আত্মীয়স্বজন যেন হয়রানির শিকার না হন, ব্যাংকের মাধ্যমে যেন তারা টাকাটা তাড়াতাড়ি পেতে পারেনÑ এর ব্যবস্থা করতে হবে। তা হলেই দেশে রেমিট্যান্সের গতি বাড়বে এবং হুন্ডি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

আহসান হাবিব : সাংবাদিক ও কলাম লেখক