advertisement
advertisement
advertisement

সমাবেশের আগের দিনই ফাঁকা রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:০০ এএম | আপডেট: ৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:১৪ পিএম
advertisement

হাতিরপুলে একটি দোকানের কর্মচারী মো. মনির। গতকাল দুপুর ১টার দিকে শেওড়াপাড়া যাওয়ার উদ্দেশে বের হন। বাংলামোটর সিগন্যালে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আগে একই জায়গায় দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যেতেন একাধিক বাস। তবে গতকাল ছিল ভিন্ন পরিস্থিতি। তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি, এখন বাজে সোয়া ২টা, কিন্তু কোনো বাস পাইনি। এর মধ্যে একটা বাস গিয়েছে কিন্তু সেটাও যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। গেটের মধ্যেও লোক ঝুলে ছিল।’

advertisement

বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকার সড়ক। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হননি। জরুরি কাজে যারা বের হয়েছিল তাদের মধ্যেও ছিল আতঙ্ক।

আর যারা বের হয়েছিল যানবাহন কম থাকায় তাদের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া চাপা আতঙ্কে যাত্রী কমেছে দূরপাল্লার বাসেও। রাজধানীর প্রবেশমুখে পুলিশের তল্লাশি গতকালও অব্যাহত ছিল। যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ, বস্তা খুুলে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করেছে পুলিশ। যাত্রী কম ছিল কমলাপুর রেল স্টেশনে। পুলিশের নজরদারিতে ছিল পুরো কমলাপুর স্টেশন।

advertisement

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, শাহবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল, কমলাপুর স্টেশন, মহাখালী ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। যাত্রীবাহী বাস ও অনান্য যানবাহন কম থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। তবে সড়কে রিকশা, মোটরসাইকেল ও কিছু ব্যক্তিগত গাড়ির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। গণপরিবহনে উঠতে হলে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। আর অনেকেই মোটরসাইকেল ও রিকশাযোগে গন্তব্যে রওনা হন।

গণসমাবেশের দিন কী হবে, এ নিয়ে আতঙ্কে ছিল অনেকে। রামপুরার বাসিন্দা মো. দুলাল মিয়া নামে একজন জানান, ‘১০ তারিখ আমার মেয়ের বিয়ে ছিল। আমরা দুই পরিবার বসে আবার বিয়ের তারিখ পরিবর্তন করেছি। ১০ তারিখ কী হবে জানি না, তবে আমরা এখন আতঙ্কে আছি। বিয়ের গাড়িতে যদি কেউ হামলা করে তাহলে তো আমরা শেষ।’

সাইফুল নামে এক উবার চালক বলেন, ‘সকাল থেকেই অন্যদিনের তুলনায় লোকজন কম। গ-গোলের ভয়ে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছে। তাই অন্যদিনের তুলনায় রাস্তাঘাট ফাঁকা। যেখানে গুলিস্তানের যানজটেই আধা ঘণ্টা লাগে, আজ ফ্লাইওভার থেকে একটানে জিপিও আসলাম। আজ সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অর্ধেক টাকা আয় করতে পারিনি।’

এদিকে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে চাপা আতঙ্কে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসে কমে গেছে যাত্রীর সংখ্যা। শুক্রবার সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ বাস কাউন্টার ফাঁকা। কর্মীরা হাঁকডাক করলেও প্রত্যাশামাফিক যাত্রী পাচ্ছেন না। কোনো যাত্রী টার্মিনালে প্রবেশ করলে ছুটে যাচ্ছেন তার দিকে।

মাগুরা যাওয়ার টিকিট কেটেছেন রামপুরার বাসিন্দা সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, আমার বাবা হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই তাকে দেখতে যাচ্ছি। একটা ভয় কাজ করছিল যে কোনো সমস্যা হয় কিনা বা গাড়ি পাব কিনা। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি।

পল্টনের একটি ছাপাখানায় কাজ করেন আব্বাস উদ্দীন। যশোরের উদ্দেশে যাত্রা করার জন্য টিকিট কেটে কাউন্টারে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, গ্রামে জমিজমা নিয়ে একটা সমস্যা চলছে। তাই বাড়ি যাচ্ছি। এখানে এসে বাস পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু যাত্রী কম থাকায় দেরি করে বাস ছাড়ছে।

মাগুরাগামী পূর্বাশা পরিবহন কাউন্টারের ম্যানেজার ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, শুক্রবারে স্বাভাবিকভাবে যাত্রী সংখ্যা বেশি থাকে। কিন্তু আতঙ্কের জন্য যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। অনেকেই ভাবছেন গাড়ি আছে কিনা বা গাড়ি চলছে কিনা। একই আতঙ্কে অনেকে ঢাকাও আসছেন না। ফলে জেলা থেকে আগত বাসগুলো প্রায় ফাঁকাই থাকছে।

ঢাকার সড়কে যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল ও তল্লাশি ছিল তেমনি কমলাপুর রেল স্টেশনেও সেই চিত্র দেখা গেছে। স্টেশনে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্টেশনের ভেতরে-বাইরে সরব উপস্থিতি দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। কিন্তু অন্যান্য দিনের স্টেশনে তেমন থাকত না।

ফিরোজ কাদের নামে এক যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পুলিশ তাকে থামিয়ে কী জানতে চেয়েছে- এমন প্রশ্নে ফিরোজ বলেন, আমার টিকিট আগেই কাটা ছিল। স্টেশনে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের একজন আমার টিকিট চেক করলেন। কোথায় যাব, কেন যাব, কেন ঢাকায় এসেছিলাম- এসব প্রশ্ন করেছে। ঢাকায় দাপ্তরিক কিছু কাজে আসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যদিও কাজ শেষ হয়নি, তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলে যাচ্ছি। সামনের সপ্তাহে এসে কাজ শেষ করব।

গতকাল দুপুর দেড়টায় স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা রাজশাহী কমিউটার ট্রেন; সেখানে যাত্রীদের সংখ্যা ছিল যেন হাতেগোনা। ওই ট্রেনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন ধানমন্ডির বাসিন্দা আরিফ আল মান্নান। ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন তিনি। ছুটি নিয়ে তিন দিন আগে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। শনিবার ফেরার কথা থাকলেও ফিরেছেন একদিন আগে। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম কাল (আজ) আসব। কিন্তু রবিবার থেকে অফিস। শনিবার যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, সেই কথা ভেবে আজকেই (শুক্রবার) চলে এসেছি। তবে ট্রেন বলতে গেলে আজ ফাঁকাই ছিল।’

কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, বাইরে একসঙ্গে বেশি মানুষকে জটলা করতে দিচ্ছে না পুলিশ। এ ছাড়া স্টেশনের ভেতরে রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ বুথেও পর্যবেক্ষক টিম কাজ করেছে। কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস বিশ্বাস বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে আমরা তল্লাশি করি। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হচ্ছে। তবে কাউকে হয়রানি করা পুলিশের উদ্দেশ্য নয়। এই অবস্থায় আমরা যাত্রীদের কাছ থেকেও সহযোগিতা আশা করছি।