বিদ্যালয়ে কমে গেছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত লাগোয়া তুমব্রু গ্রামটি জিরো পয়েন্ট থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা আছেন নানা বিড়ম্বনায়। রোহিঙ্গাদের জায়গা দিতে গিয়ে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও এখন প্রায় বন্ধ। কমে গেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজন ও অভিভাবকরা।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ঘুমধুমের বাসিন্দা রাজা মিয়া জানান, রোহিঙ্গা প্রবেশের ছয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা এখনো তুমব্রু গ্রামে অবস্থান করছেন। তারা অপরিকল্পিতভাবে বসত গড়েছে। খোলা জায়গায় যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগ করছেন। সর্বত্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। ছোট্ট এই গ্রামে এত রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া মাদকাসক্ত রোহিঙ্গারা ঝামেলা করছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল বশর বলেন, রোহিঙ্গারা তুমব্রুর পরিবেশ নষ্ট করছে। বিশেষ করে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে নিবেদন, এসব রোহিঙ্গাকে দ্রুত অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হোক।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গ্রামের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তুমব্রু প্রাথমিক বিদ্যালয়। অনিরাপদ মনে করায় অনেক অভিভাবক সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না। এভাবে চলতে থাকলে পড়ালেখার ক্ষতি হবে।
তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম বলেন, আমার বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৬২ জন। রবিবার শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল ২০০ জন। পরের
দিন সোমবার উপস্থিতি ছিল ৩০০ জন। তবে জাতীয় কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ার দিন থাকায় গতকাল ৪৯০ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেঁষে এত রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা আসতে চাচ্ছে না। এতে শিক্ষার মারাত্মক ক্ষতি হবে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কয়েকজন সদস্য তুমব্রু গ্রামে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীদের নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, দুটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। একটি রাষ্ট্রীয়, অপরটি শিশু শিক্ষার্থীর স্বার্থ। উচ্চ মহলে আলোচনা করে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের সরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জানুয়ারি জিরো পয়েন্টে আগুন ও গোলাগুলির পর এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘুমধুমের তুমব্রু গ্রামে আশ্রয় নেন।