advertisement
advertisement
advertisement

গ্যাস দুর্ঘটনা কমাতে চাই সচেতনতা

আহসান হাবিব
১৮ মার্চ ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ১২:০২ এএম
advertisement

বারবার কেন ঘটছে ভয়াবহ বিস্ফোরণ? বিশেষ করে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে ঢাকা-চট্টগ্রামে এমন ভয়াবহ তিনটি বিস্ফোরণের ঘটনা দেশবাসীকে শঙ্কায় ফেলেছে। উঠেছে নানা প্রশ্ন।

advertisement

চট্টগ্রামের সীতাকু-ে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের কয়েকদিনের মাথায় এবার বিকট শব্দে কেঁপে উঠল রাজধানীর সিদ্দিকবাজার। বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, নিচের দুটি ফ্লোরের ছাদের একাংশ ধসে পড়ে। সাইনবোর্ডসহ ভবনটির বিভিন্ন অংশ উড়ে গিয়ে সড়কের অপর পাশের স্থাপনায় মারাত্মকভাবে আঘাত হানে। নিভে যায় শবেবরাত উপলক্ষ্যে রোজা রেখে ইফতারি কিনতে যাওয়া মানুষ, ব্যবসায়ী ও অনেক সাধারণ পথচারীর জীবন প্রদীপও। ব্যস্ত সড়কে কয়েক সেকেন্ডের জন্য নেমে আসে নিস্তব্ধতা। আহতদের তীব্র আর্তনাদ এবং উপস্থিত মানুষের গগনবিদারী চিৎকারে কাচের টুকরার মতো ভাঙে নগরীর চাঞ্চল্য। এর পর ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারীরা একে একে উদ্ধার করে ১৮ জনের লাশ। আহত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। আহত অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়া লোকের মধ্যে আরও মারা যান ৫ জন।

এমন বড় বড় বিস্ফোরণ ছাড়াও মাঝে মধ্যেই বাসাবাড়িতে বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাতের খবর পাওয়া যায়। এতে অনেকেই হতাহতও হন। বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকা-ের বেশিরভাগ ঘটনাই এসি, রান্নাঘরের গ্যাস পাইপলাইনে লিক কিংবা গ্যাসের লাইন ও সিলিন্ডার লিকেজের কারণে বদ্ধঘরে গ্যাসের কূপে পরিণত হওয়া থেকে। প্রতিটি দুর্ঘটনার ব্যাপ্তি আলাদা হলেও ঢাকার সায়েন্সল্যাবের কাছের ভবন, সিদ্দিকবাজারের ভবন এবং ২০২১ সালে মগবাজারের দুর্ঘটনাগুলো একই প্রকৃতির।

advertisement

নিয়মিত বিরতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণজনিত ঘটনা ঘটছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ভয়াবহ তিনটি বড় বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনা। প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গু হয়েছেন অনেকেই। এ তিনটি ঘটনার কোনোটির সঙ্গেই নাশকতা কিংবা পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরকদ্রব্যের ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্ত শেষে বিস্ফোরণগুলোর পেছনে ভবনগুলোর অভ্যন্তরে সৃষ্ট সমস্যাকেই দায়ী করেছেন। যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

তাজরীন ফ্যাশন আর রানা প্লাজার দাগ শুকাতে না শুকাতেই রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানা, বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকা-, সীতাকু-ের বিএম কনটেইনার ডিপোর মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের বিস্ফোরণ। এসব বিস্ফোরণের ঘটনায় যারা হতাহত হয়েছেন, যারা সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের পরিবার-পরিজন আজ কী অবস্থায় আছেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের কেউ কি তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। না, নেননি। এলপি গ্যাসের বহু কারখানা আছে বাংলাদেশে। এই এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের ব্যবহার হচ্ছে অরক্ষিত যানবাহনে। প্রতিটি সিলিন্ডার যেন চলন্ত বোমা। এজন্য যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

বাংলাদেশের যত মিল, কারখানা, গার্মেন্ট আছে সবগুলো নিয়ে একটা তদন্ত প্রয়োজন। সেই তদন্তের ভিত্তিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। যারা মধ্যযুগীয় কায়দায় কারখানা পরিচালনা করেন তাদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা আর সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট, বিএম কনটেইনার, তাজরীন ফ্যাশনস, রানা প্লাজা, নিমতলীর মতো ঘটনা দেখতে চাই না। প্রতিবার প্রাণহানির পর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে হাজারো অনিয়ম আর অবহেলার কথা। গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের ক্ষেত্রেও একইরকম। তদন্ত হবে। বেরিয়ে আসবে নানা অনিয়ম। কিন্তু সেই তদন্ত আর আলোর মুখ দেখবে না। হয়তো বা অপরাধীরা পারও পেয়ে যাবেন।

অনাকাক্সিক্ষত এই প্রাণহানি এবং সম্পদের ক্ষতি এড়াতে সবার সচেতনতা ও সতর্কতা জরুরি। তৎপরতা বাড়াতে হবে তদারকি সংস্থাগুলোকে। বিশেষ করে সেপটিক ট্যাংক, এসি, গ্যাসের লাইন, গাড়ি ও বাসার সিএনজি সিলিন্ডার, কারখানার বয়লার ও রাসায়নিক গুদাম রক্ষণাবেক্ষণে মানুষকে আরও মনোযোগী হতে হবে। গ্যাস বিক্রয় ও ডিস্ট্রিবিউশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ভবনে গ্যাসজাতীয় দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। যেমন- পুরনো গ্যাসলাইনগুলো শনাক্ত, মেরামত বা প্রতিস্থাপন করা, গ্যাস রাইজার লিকেজ নিয়মিত পরীক্ষা করা। গ্যাসে গন্ধযুক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত করা, যাতে লিকেজ হলে সহজে শনাক্ত করা যায়। ভবনবাসীর জন্য পুরনো পাইপলাইন মেরামত ও নিয়মিত লিকেজ পরীক্ষা করা, বদ্ধ জায়গায় গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্তে গ্যাস সেন্সর ও অ্যালার্মের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তা না হলে বারবার এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। দিনের পর দিন এভাবে চলে কেমনে- এ প্রশ্ন আমাদের।

এসব কারখানার কাজে অসাবধানতা, উদাসীনতা, অদক্ষতা বা সতর্কতার বিষয়টির ওপর সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোর দেওয়া জরুরি। নতুবা বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটবে-যেটা মোটেও কাক্সিক্ষত নয়। এছাড়া সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হয়ে যাই, তা হলে অনেক দুর্ঘটনা কমে যাবে। তা ছাড়া পরিত্রাণের কোনো সম্ভাবনা আছে বলে জানা নেই।

আহসান হাবিব : সাংবাদিক ও কলাম লেখক