চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
চট্টগ্রাম নগরীতে চলন্ত বাসে পোশাককর্মী তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে বাসের চালক ও সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাসটিও জব্দ করা হয়েছে। বুধবার রাতে হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম কুয়াইশ থেকে বাসচালক এবং নগরীর সিএন্ডবি এলাকা থেকে সহকারীকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানাপুলিশ।
এদিকে ধর্ষণচেষ্টার সময় বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত তরুণী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন, মানসিকভাবেও
বিপর্যস্ত বলে জানায় পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার চালকের নাম আনোয়ার হোসেন টিপু (২৪) এবং সহকারী জনি দাশ (১৮)। উভয়ের বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার সিএন্ডবি এলাকায়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা বলেন, তরুণীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা রাহাত্তারপুল এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। ফুটেজ থেকে বাসটি শনাক্ত করা হয়। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, বাসটি ভাড়ায় নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আনা-নেওয়া করত। বাস শনাক্তের পর চালক ও সহকারীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য আমরা সংগ্রহ করে তাদের গ্রেপ্তার করি। সিএন্ডবি এলাকা থেকে বাসটি জব্দ করা হয়েছে।
আক্রান্ত ২০ বছর বয়সী তরুণী নগরীর কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। চান্দগাঁও এলাকায় তার বাসা। গত ১৯ মে রাতে নগরীর রাহাত্তারপুল থেকে ওই তরুণীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। খবর পেয়ে পুলিশ তরুণী কীভাবে আহত হলেন তার অনুসন্ধান শুরু করে। তবে পাঁচদিন ধরে সংজ্ঞাহীন ছিলেন ওই তরুণী। গত মঙ্গলবার তার জ্ঞান ফেরে। বুধবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত কারখানার বাসে তরুণী প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন। ১৯ মে রাত ৯টার দিকে কারখানা ছুটি হয়। তিনি বাসায় ফেরার জন্য একই কারখানার আরও ১০-১২ জন শ্রমিকের সঙ্গে বাসে ওঠেন। বাস বহদ্দারহাট এলাকায় পৌঁছার পর অন্য শ্রমিকরা দ্রুত নেমে যান। পেছনের আসন থেকে এগিয়ে নামার সময় তাকে নিয়ে বাস দ্রুত রাহাত্তারপুলের দিকে এগিয়ে যায়।
বাসের চালকের আসনে ছিলেন সহকারী। আর চালক দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাস যখন বহদ্দারহাট থেকে রাহাত্তারপুলের দিকে যেতে থাকে, তখন চালক তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় সম্ভ্রম রক্ষায় চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে জ্ঞান হারান তরুণী।
বুধবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ওই তরুণী নগরীর বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এর পর টানা ছয় ঘণ্টার অভিযানে পুলিশ চালক ও সহকারীকে আটকের পাশাপাশি বাস জব্দ করে।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ওই তরুণী এখন নিজের বাসায় অবস্থান করছেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই তরুণী আমাদের সময়কে বলেন, বাস যখন বহদ্দারহাট মোড়ে আসে, অন্যরা নেমে যায়। আমি নামতে গেলে বাস দ্রুত রাহাত্তারপুলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আমি চিৎকার করে তাদের থামাতে বলি। তখন একজন বাসের জানালা বন্ধ করতে থাকে। আমি ভয় পেয়ে যাই। সে এসে আমাকে টেনে বাসের পেছনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করলে আমি তাকে ঘুষি মেরে চলন্ত বাস থেকে লাফ দিই।