‘হলই যদি না থাকে, তা হলে কী সিনেমা থাকবে? হল বাঁচলেই তো সিনেমা বাঁচবে। অথচ এটা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা আছে? সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে, কম হচ্ছে; হচ্ছে তো। এর মধ্যে কয়টা দর্শক টানতে পারছে?’ কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা। এই নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে হলমালিকদের এক মতবিনিময় সভাও হয়েছে। সেখানে সংগঠনের নেতারা বলেছিলেন, ‘হল মালিকরা ঋণ নিতে খুবই আগ্রহী; কিন্তু ঋণ নিয়ে টাকাটা সুদসহ ফেরত দিতে গেলে সিনেমা চালিয়েই ফেরত দিতে হবে। এখন দেশে যে সিনেমাগুলো হচ্ছে, সেগুলো দর্শক দেখতে আসছেন না। হল ব্যবসা কঠিন সময় পার করছে। এই দুঃসময়ে হিন্দি সিনেমা আমদানির অনুমতি দিলে আমাদের জন্য ভালো হয়।’ হিন্দি সিনেমা আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। হবে কিনা সেটাও এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। হলমালিকরা আশায় বুক বেঁধে আছেন।
করোনার পর সিনেমা হল চালু হলেও দর্শকসাড়া খুব একটা ছিল না। রোজার ঈদে চিত্রটা ছিল ভিন্ন। শাকিব খান ও সিয়ামের দুই ছবি দেখতে এসেছিলেন দর্শক। এবার মনে হয় ভালো কিছু হবে- এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন হলমালিকরা। সিনেমার মানুষেরাও ভেবছিলেন, ইন্ডাস্ট্রির মন্দার দিন হয়তো কাটতে চলছে। তবে তার কিছুই হয়নি। আবার দর্শকশূন্য সিনেমা হল। এর মধ্যে সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। তারকাবহুল সিনেমাই এসেছে হলে হলে। ‘পাপ-পুণ্য’ নামের সিনেমাটি দর্শক কেন দেখেননি- এটাই প্রশ্ন! অথচ এই সিনেমা দিয়ে দীর্ঘদিন পর জুটি বেঁধেছিলেন ‘মনপুরা’ ছবির নায়ক চঞ্চল চৌধুরী ও পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম। হলমালিকদের একজন বলেছেন, ‘ঈদে কিছু দর্শক পেয়েছিলাম। তার পর থেকেই একেবারে ফাঁকা। দর্শক যে আসলে কী ছবি দেখতে চায়, সেটাই বুঝতে পারি না। এভাবে লস দিয়ে তো আর ব্যবসা করা যায় না। যারা সিনেমা বানান তারা তো বিজ্ঞাপন, টিভি-ফেসবুক দিয়া টাকা পেয়ে যান। আমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হই।’
‘পাপ-পুণ্য’ ছবির চেয়েও করুণ চিত্র প্রায় ৯০ লাখ টাকায় নির্মিত ‘আগামীকাল’ সিনেমার। নাটক নির্মাণে স্বনামধন্য অঞ্জন আইচ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে এসে প্রথমেই সুপারফ্লপ তকমার স্বাদ পেলেন। গত ১০ জুন মুক্তি পাওয়া ‘বিক্ষোভ’ সিনেমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন অনেকেই। ধারণা ছিল, তারকাবহুল সিনেমাটি হলে দর্শক টানবে। কলকাতার শ্রাবন্তী ছিলেন সেই প্রত্যাশার পক্ষের বাজি। তবে সেখানেও ব্যর্থতা। বলা চলে, কোনো আলোচনাই পায়নি সিনেমাটি। গেল সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ‘অমানুষ’ ও ‘তালাশ’ সিনেমাও হলে দর্শক টানতে পারছে না। যদিও ছবি দুটি মুক্তি পেয়েছে দেশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে। মুক্তির দিন থেকেই দেশজুড়ে থেমে থেমে চলছে বৃষ্টি। এমন আবহাওয়ার মধ্যে দর্শক আশা করাও মুশকিল। তবে দিনশেষে লোকসান তো গুনতে হচ্ছে হল মালিকদেরই। যার ফলে পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকেছে বলে দাবি করছেন তারা। একই চিত্র প্রায় সব হলেই। তাই হল ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে হিন্দি সিনেমাসহ বিদেশে সিনেমা মুক্তির দাবি হলমালিকদের। এই দাবি অবশ্য তাদের দীর্ঘদিনের। কয়েকবার আন্দোলনও করেছেন তারা।
আবারও মানসম্মত বাংলা সিনেমা না থাকায় লোকসানের শঙ্কা দেখিয়ে ভারতীয় সিনেমা আমদানির দাবি তুলেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা। ঢাকার মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী, পান ব্যবসায়ীরাও আমাদের চেয়ে ভালো আছে। তাদের বেচাবিক্রি আমাদের চেয়ে বেশি হয়। আমাদের এসির বিল, কর্মচারীর বিলটাও উঠে না টিকিট বিক্রি করে। সিনেমার প্রযোজক তো নানা উপায়ে টাকা পাচ্ছেন। আমরা তো সিনেমা চালিয়ে শুধু লস গুনছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিনেমা হল বাঁচাতে হলে অবশ্যই হিন্দি সিনেমা আমদানি করতে হবে। তা না হলে সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে হবে। দর্শকের অনেক আগ্রহ হিন্দি সিনেমার প্রতি, ভারতের সিনেমার প্রতি। সেগুলো আমদানি করে চালাতে পারলে হয়তো দর্শক হলে পাওয়া যেত। একবার হলে ফিরলে সেটা অভ্যাস হবে। তখন দেশের সিনেমাগুলোও দর্শক পাবে বলে আমার বিশ্বাস।’