সরকারি বরাদ্দের যা আসে তার সবই যায় মেয়রের পকেটে। উন্নয়নের টাকায় পৌরসভার উন্নয়ন হয়নি। মেয়রের দুই ভাই মিলে লুটেছেন নানা প্রকল্পের টাকা। এভাবেই গত সাত বছরে রাজশাহীর কেশরহাট পৌরসভার সাত কোটি টাকা নয়-ছয় করেছেন মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ। মেয়র হওয়ার পর নির্মাণ করেছেন আলিশান বাড়ি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী সংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পৌরসভার পাঁচজন কাউন্সিলর এসব অভিযোগ করেছেন। এর আগে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তারা। তবে কোনো প্রতিকার পাননি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুল আক্তার।
তিনি বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় প্রতি অর্থবছরে ৭৮-৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ কেশরহাট পৌরসভায়। এ টাকা সামাজিক উন্নয়নে টেন্ডারের মাধ্যমে ব্যয় হওয়ার কথা থাকলেও মেয়র বিভিন্ন নাম মাত্র কোটেশন দেখিয়ে ইচ্ছে মতো বিল ভাউচার বানিয়ে আত্মসাৎ করেন। কেশরহাট পৌরসভা প্রতিবছর এক কোটি টাকারও বেশি আয় করে হাট ইজারা দিয়ে। এ টাকাও লোপাট হয়ে যায়। এছাড়া ভূমি কর, রেজিস্ট্রি অফিস ও হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করলেও সে টাকাও লুটপাট হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন পৌরসভায় ৫০ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেন। এই টাকা মেয়র তার অফিস সাজানোর নামে পুরোটাই ব্যয় করেন। সরকার কেশরহাট পৌরসভার উন্নয়নে ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন মার্কেট নির্মাণ করেছে দিয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ভাড়ার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। এই ভাড়ার টাকাও পৌরসভার তহবিলে জমা হয় না। আত্মসাৎ করেন মেয়র। এছাড়া পৌরসভার আরেকটি দোতলা মার্কেট আছে। প্রায় শতাধিক ঘর কোন রেজুলেশন ও নিয়ম, নীতি ছাড়া বরাদ্দের মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মেয়র শহিদুজ্জামান।
কাউন্সিলররা জানান, ‘মেয়রের আপন ছোট ভাই পৌরসভায় লাইসেন্স পরিদর্শক পদে চাকরি করেন। তারা দুই ভাই মিলে পৌরসভায় লুটপাট চালাচ্ছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় হলফ নামায় মেয়র যে পরিমাণ সম্পদ দেখিয়েছেন তার চেয়ে এখন বহুগুণ বেড়েছে। তার নিজস্ব ব্যবসা বাণিজ্য, জমি-জমা বা পরিবারের কেউ কোনো চাকরি না করলেও গ্রামে ডুপ্লেক্স দুটি বাড়ি করেছেন মেয়র।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাবের আলী মন্ডল, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল হাফিজ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসলাম হোসেন।
তারা বলেন, নির্বাচনের সময় তারা জনগণকে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। কিন্তু পৌরসভায় গিয়ে দেখছেন জালিয়াতি। তারা জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছেন না। তাদের নামেই বিভিন্ন কমিটিতে রাখা হলেও কোনো কাজ থাকে না। সব কাজ একাই করেন মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ। এ জন্য তারা এর প্রতিবাদ করছেন।
এ বিষয়ে কেশরহাট পৌরসভার মেয়র ও মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শহিদুজ্জামান শহিদ বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। যারা এ অভিযোগ করছেন তাদের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা নিয়ে আমি ব্যস্ত আছি। ব্যস্ততা শেষ করে তাদের অনিয়মের খতিয়ানও জনগণের সামনে উন্মোচন করা হবে।’