advertisement
advertisement
advertisement

পুড়েছে ২০০০ ঘর, ক্ষতিগ্রস্ত ২২ হাজার মানুষ
উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন দিল কে?

সরওয়ার আজম মানিক ও পলাশ বড়ুয়া,রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে
৫ মার্চ ২০২৩ ০৮:২০ পিএম | আপডেট: ৬ মার্চ ২০২৩ ০৮:৫০ এএম
ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট প্রায় ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ছবি: আমাদের সময়
advertisement

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীর তিনটি রোহিঙ্গা শিবিরে কী কারণে আগুন লেগেছিল, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক যুবককে আটক করা হয়েছে।

আরসা সন্ত্রাসীরা এ আগুন দিয়েছে বলে দাবি করেছেন শিবিরের বাসিন্দারা। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। আগুন দেওয়ার নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

advertisement

আগুনে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এতে ২২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৩৫টি মসজিদ, বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কার্যালয়, স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসহ ৫২টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আজ রোববার বিকেল ৩টার দিকে উখিয়ার বালুখালীতে প্রথমে ১১ নম্বর শিবিরের ‘বি’ ও ‘ই’ ব্লকে আগুন লাগে। পরে পাশের ১০ ও ৯ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। 

advertisement

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন ৩ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক অতীশ চাকমা। তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট কাজ করে।

অতীশ চাকমা বলেন, আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষত-ক্ষতি নির্ধারণে কাজ চলছে। তা বলতে সময় লাগবে।

এবিপিএন-৮-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, আজ বেলা ৩টার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হঠাৎ করে আগুন দেখা যায়। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ক্যাম্পের ঘরগুলো পাশাপাশি হওয়ায় আগুন ১২, ১১, ১০ ও ৯ নম্বর শিবিরে ছড়িয়ে পড়ে।

আগুনের সূত্রপাত কী কারণে, তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সন্দেহজনক এক যুবকে আটক করেছে পুলিশ। আটক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত বলা যাবে বলেও জানান ফারুক আহমেদ। 

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ১১ নম্বর শিবিরের একটি বাড়ির রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সুত্রপাত হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম এবং পরে কক্সবাজার শহর রামু টেকনাফে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের ৮টি টিম আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। ক্যাম্পের প্রতিটি বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। আগুনে এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়ায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়।

আগুন দেওয়ার নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেও জানান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

শিবিরের এই আগুনকে পরিকল্পিত নাশকতা বলছেন রোহিঙ্গারা। শিবিরের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আবলু কামাল, আবদুল গফুর ও শামসুল আলম বলেন, আরসা সন্ত্রাসীরা এ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

১১ নম্বর রোহিঙ্গা শিবেরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও কলিমুল্লাহ বলেন, ‘শনিবার রাতে ও রোববার সকালে কয়েকটি ছোটখাট ঘটনা ঘটেছে আমাদের ক্যাম্পে। কয়েকজন ছেলেকে আগুন দিতে গিয়ে স্থানীয়রা দৌড়ানি দিয়েছে, তখন তারা পালিয়ে যায়। এখন আমরা আশঙ্কা করছি, সন্ত্রাসীরাই আগুন দিয়েছে আমাদের ক্যাম্পে।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি দেখার জন্য আমি নিজে এসেছি। আমরা দেখছি কী কারণে আগুন লেগেছে। ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহীন মানুষদের মাঝে রাতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, একই শিবিরে ২০২১ সালের ২২ মার্চ ভয়াবহ আগুন লেগেছিল। ওই সময় ১১ জনের মৃত্যু হয়। আর পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হন। পুড়ে যায় ৯ হাজারের বেশি ঘর।  

আরও পড়ুন:

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২০০০ ঘর পুড়ে ছাই