যে কোনো দেশের অর্থনীতির চাকা সুচারুভাবে চালাতে সুস্থ ও সমৃদ্ধ ব্যাংকিং খাত আবশ্যক। গত তিন দশকে বাংলাদেশে অর্থনীতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিং খাতেরও বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু সেই বিকাশ যে সুস্থধারায় প্রবাহিত হয়নি, তার প্রমাণ সরকারি-বেসরকারি ১১ ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে আছে। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অন্তত ছয়টি ব্যাংকের মূলধন ভিত্তির অনুপাত (সিএআর) ঋণাত্মক ধারায় নেমেছে। এ ছাড়া ঘাটতিতে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাংক বছরের পর বছর বড় ধরনের মূলধন ঘাটতি নিয়ে চলছে। এ ধরনের পরিস্থিতি ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতির দুর্বলতা নির্দেশ করে।
খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে ব্যাংকের প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয় বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নিয়মিত বা ভালো ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের প্রভিশন রাখতে হয় এক বা দুই শতাংশ। কিন্তু খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন জমা রাখতে হয়। ব্যাংকের স্বাস্থ্য রক্ষা ও আমানতকারীদের স্বার্থ অক্ষুণœ রাখার জন্যই প্রভিশন রাখার এই ব্যবস্থা। খেলাপি হওয়া ঋণ উদ্ধার করার সম্ভাবনা কমে যায়। ফলে এর বিপরীতে নগদ টাকা প্রভিশন রাখার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত এই প্রভিশন রাখতে গিয়ে অনেক ব্যাংক প্রয়োজনীয় মূলধন রাখতে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। কেননা দিনশেষে মূলধন থেকে তহবিল সরিয়ে তা প্রভিশন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকগুলোকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বা অন্য দুর্বল বেসরকারি ব্যাংকগুলো কেন ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এর অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। অনিয়মের মাধ্যমে এসব ব্যাংক থেকে ঋণের নামে বের করে ফেলা হয়েছে বড় অঙ্কের টাকা। কোনো দেশের ব্যাংক খাতে মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত কম থাকলে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে বিনিয়োগ বা ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের শক্তিমত্তা নিরূপণের জন্য এই আর্থিক সূচকটি বেশ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য একাধিক আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। এ কারণেই একের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটেছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ সীমা ছাড়িয়েছে, কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাহকদের আস্থা হারিয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত ব্যাংকিং খাতের সংকট উত্তরণে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া।