advertisement
advertisement
advertisement

সকালে গ্রেপ্তার, দুপুরে কারাগার, সন্ধ্যায় মুক্তি

চিত্রনায়িকা মাহির নামে ২ মামলা

গাজীপুর প্রতিনিধি
১৯ মার্চ ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ১১:৪০ পিএম
সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা কারাবাসের পর গতকাল গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি -আমাদের সময়
advertisement

গ্রেপ্তারের পর কয়েক ঘণ্টার মাথায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে ছাড়া পান। এর আগে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ দুটি মামলায় মাহির জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনের নথিপত্র গাজীপুর জেলা কারাগারে পৌঁছলে মাহিকে মুক্তি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গতকাল সকালে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার পর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে মাহিকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। এর পর দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। বিকালে সিএমএম কোর্ট ৫-এর বিচারক মো. ইকবাল হোসেন দুটি মামলায় তাকে জামিন দেন।

advertisement

জামিন শুনানিতে মাহির আইনজীবী ছিলেন রিপন চন্দ্র সরকার, আনোয়ার সাদত ও কামরুল হাসান। রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘দুটি মামলাই আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। একটা ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা। বিজ্ঞ আদালত এই গ্রাউন্ডে জামিন মঞ্জুর করেছেন যে, উনি একজন নারী এবং অন্তঃসত্ত্বা।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাহি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওমরাহ থেকে দেশে আসেন। দেশে আসার সময় বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন করলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।’

আইনজীবী বলেন, ‘পুলিশের নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনী থাকায় এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়ায় দুপুরের শুনানিতে আমরা জামিনের আবেদন করতে পারিনি।’ গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. আনোয়ারুল করিম বলেন, ‘মাহির জামিনের কাগজপত্র সন্ধ্যায় কারাগারে পৌঁছেছে। পরে তা যাচাই-বাছাই

advertisement

করে সত্যতা পাওয়া গেলে সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পর তিনি গাড়িতে করে চলে যান।’

জেল সুপার মো. আনোয়ারুল করিম জানান, আদালত থেকে একটি প্রিজনভ্যানে করে মাহিকে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে গাজীপুর জেলা কারাগারে আনা হয়।

মারধর, ভাঙচুর, চাঁদাবাজিসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে গাজীপুর মহানগরের বাসন থানায় দুটি মামলা হয় গত শুক্রবার। বাসন থানার এসআই মো. রোকন মিয়া বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি করেন। এ ছাড়া মারধর, ভাঙচুর, চাঁদা দাবি ও জমিদখলের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে হুকুমের আসামি করে আরেকটি মামলা করেন স্থানীয় ইসমাইল হোসেন। এ মামলায় ২৮ জনকে আসামি করা হয়।

স্বামীর সঙ্গে সম্প্রতি ওমরাহ করতে সৌদি আরব যান মাহি। সেখান থেকে শুক্রবার সকালে ফেসবুক লাইভে এসে স্বামীর গাড়ির শোরুমে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ তোলেন তিনি। মাহি বলেন, ইসমাইল হোসেন ও মামুন সরকারের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও তোলেন মাহি।

ফেসবুক লাইভের পর শুক্রবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, রকিব সরকার তার প্রায় সোয়া ১১ শতাংশ জমি দখল করে গাড়ির শোরুম করেছেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন, বিষয়টি মীমাংসার জন্য দফায় দফায় চেষ্টাও করা হয়। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে নতুন কিছু গাড়ি রকিব সরকারের লোকজন ওই শোরুমে উঠাতে থাকেন। এমন খবর পেয়ে তিনি সেখানে হাজির হলে রকিব সরকারের লোকজন তার ওপর হামলা চালায়। তারা নিজেরাই নিজেদের শোরুমের ভাঙচুর করেছে বলে দাবি করেন ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘জমি ছেড়ে দেওয়ার শর্তে রকিব সরকার তার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। যেখানে এক কোটি টাকা দিলে সমস্যা সমাধান হয়, সেখানে কেন আমি পুলিশকে দেড় কোটি টাকা দেব? পুলিশ আমার পক্ষে থাকলে আজ কেন আমি মার খেলাম? মেট্রোপলিটন পুলিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই রকিব সরকার তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা মাহিকে ব্যবহার করছেন।’

পুলিশ কমিশনারের সংবাদ সম্মেলন

এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, গত শুক্রবার সকালে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে বাসন থানাপুলিশ গিয়ে গাড়ির শোরুমের সামনে ২০-২৫ জনকে জড়ো হতে দেখেন। তারা সবাই রকিব সরকারের লোক বলে জানায়। সেখানে উপস্থিত মামুন সরকার নামে একজনের উদ্ধৃতি দিয়ে মোল্যা নজরুল জানান, ওই ১৫-২০ জন ইসমাইল হোসেন নামে একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরে ইসমাইলের মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে মাহি ও তার স্বামী একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এতে বাংলাদেশ পুলিশ ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাসহ নানা অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, মাহি পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। পুলিশ কখনই এমন কাজে জড়িত নয়। পুলিশ কমিশনার জানান, রকিব সরকারের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণসহ তিনটি মামলা রয়েছে। এগুলোর এফআরটি-২ রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। সে মামলাগুলোরও আবার তদন্ত হবে।

তিনি বলেন, ‘মাহি অন্তঃসত্ত্বা, তাই আমরা তার রিমান্ড চাইনি। তার স্বামী এখনো পলাতক।’

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মাহিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুনেছি, গাজীপুরের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে এসে মাহি কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। এ জন্য মামলা হয়েছে। আমি সব কিছু জানি না, শুনেছি। এটি ভালো করে জেনে আমি বলতে পারব।’

মাহির অভিযোগ তদন্ত করা হবে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখন একটা অভিযোগ আসে, তখন তদন্ত করতে হয়। তদন্তে সব কিছু বেরিয়ে আসবে। মাহির বক্তব্য সঠিক কিনা, কিংবা পুলিশ যেটি করেছে সেটি সঠিক কিনা, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’

মাহির স্বামী রকিব সরকার গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া এলাকার শামসুদ্দিন সরকারের ছেলে। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য। তার বড়ভাই কামরুল হাসান সরকার রাসেল গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক। আরেক ভাই সুলতান উদ্দিন সরকার শ্রমিক লীগ নেতা। গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাদের বিভিন্ন মার্কেট ও দোকান রয়েছে। রকিব সরকার ২০২১ সালে মাহিকে বিয়ে করে আলোচনায় আসেন। অন্যদিকে মাহি চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি আসন থেকে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। পরে সেখানে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর গণসংযোগে অংশ নেন তিনি।