বাংলাদেশে বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশিরা বিনিয়োগও করছেন। কিন্তু প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়ানোও যাচ্ছে না। বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে হলে ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে হবে। বিদেশিরা চান দীর্ঘমেয়াদি রাজস্বনীতি ও বাণিজ্যনীতি। দেশের অর্থনীতি ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স আ্যন্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সাধারণ সম্পাদক
তারেক রাফি ভূঁইয়া (জুন)। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন হারুন-অর-রশিদ
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কনসালটেন্সি সেবা প্রদান করে নিউভিশন সল্যুশন লিমিটেড। এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারেক রাফি। তিনি বলেন, বিদেশিরা দেশে এসেই সরকারি নিয়মনীতি সবার আগে পর্যবেক্ষণ করেন। নিয়মনীতি তাদের ব্যবসার জন্য কতটুকু সহায়ক এটি সবার আগে বিশ্লেষণ করা হয়। বাংলাদেশের করনীতি ও ভ্যাটনীতি প্রায়ই বদলানো হয়। একেক বছর একেক শিল্পকে সুবিধা দেওয়া আবার হঠাৎ করে তা প্রত্যাহার করা হয়। এতে বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হন। তারা দীর্ঘমেয়াদি নীতিকাঠামো চান। দীর্ঘমেয়াদে বড় বিনিয়োগ করতে প্রশাসনিক নিশ্চয়তা তাদের দাবি।
জাপানি বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের অন্যতম এই পরামর্শক বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়ছে। এশিয়ার সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ জাপান ধীরে ধীরে বাংলাদেশের রপ্তানির বড় বাজার হয়ে উঠছে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি হয়েছে ১৩৬ কোটি ৫৭ লাখ মার্কিন ডলারের। অর্থাৎ সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে জাপানে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে প্রধান রপ্তানি গার্মেন্টস পণ্য এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরে সেখানে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। ফলে প্রধান রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে জাপান বড় বাজার হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের জন্য কানেক্টিভিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সমুদ্রবন্দরের সেবার মান নিয়ে বিদেশিদের প্রশ্ন রয়েছে। গভীর বন্দর না থাকায় পণ্য আসার এবং খালাসে অনেক সময় লেগে যায়। এই সংকট সমাধানে জাপানিদের বিনিয়োগে মাতারবাড়ি বন্দর করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে সরকার বড় বড় রাস্তা তৈরি করছে। ঢাকা শহরে মেট্রোরেল করা হচ্ছে। এতে জাপানি বিনিয়োগ রয়েছে।
তিনি বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক অনেক গভীর। জাইকা ও জেট্রোর মাধ্যমে জাপানি কোম্পানির বিনিয়োগ দেখভাল করা হচ্ছে। এ দেশে বর্তমানে ৩০৫টি জাপানি কোম্পানি ব্যবসা করছে। নারায়ণগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। চট্টগ্রামে মিরেরসরাই বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি প্রতিষ্ঠান শিল্প গড়তে চায়। সুমিতোমোর মতো প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের কাজ করছে। এতে বিদেশিদের জন্য মানসম্মত বিনিয়োগক্ষেত্র তৈরি করা সম্ভব হবে।
এ ব্যবসায় বলেন, জাপানিরা আগে মূলত দুই খাতে বিনিয়োগ করত অবকাঠামো ও নির্মাণকাজে। এখন থেকে পণ্য তৈরি করে শুধু বিদেশে বিক্রি করত। এখন দেশের বড় ক্রেতার বাজারে ব্যবসাও করতে চান জাপানিরা। এ জন্য খাদ্য প্রক্রিয়া, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্যের কারখানা দেশে হচ্ছে, যা বাংলাদেশে এবং বিদেশেও বিক্রি হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি জাপান সরকার ঘোষণা দিয়েছে ৩ লাখ দক্ষকর্মী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নেবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ অন্যতম শ্রম রপ্তানিকারক দেশ। জাপানের বাজার মধ্যপ্রাচ্যের মতো নয়। এখানে প্রশিক্ষিত কর্মীকে তারা শুধু নিতে চায়। এ জন্য সরকারকে এই বাজার ধরার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশবাসীর বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘ সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। আগামীকাল ৪৮তম গৌরবময় বিজয় দিবস। অর্থনীতিতে বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। গত অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন এশিয়ান টাইগার বা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল।
চেম্বার সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা জাপানের নাগরিক বাংলাদেশে ব্যবসা করছেন এবং বাংলাদেশি যারা জাপানের সঙ্গে ব্যবসা করছেন, তারা এই সংগঠনের সদস্য। এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ২১৫ জন। সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য- উভয় দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্পর্কে বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে পরস্পরকে সহযোগিতা করা। এর মাধ্যমে উভয় দেশের অর্থনৈতিক গতি চাঙ্গা করাই এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য।