ঘর থেকেই হতে হবে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের সূত্রপাত। গতকাল রোববার ইয়ুথ পলিসি ফোরাম (ওয়াইপিএফ) কর্তৃক আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এমন মতামতই ব্যক্ত করেন বক্তারা। লিঙ্গসমতায় কোভিড-১৯ এর প্রভাব বিষয়ক এই আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনে কর্মরত বিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা, ঝুঁকিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসনমুখী সংস্থা বাসা বুটিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিন সেফার্ট, কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিরত শিক্ষার্থী নাহেলা নওশিন, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর কমিউনিকেশনস অফিসার আরুশা রাহিম ও ভরসা’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা তাহানা তাসমিয়া।
ইয়ুথ পলিসি ফোরাম-এর পেজ থেকে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে প্রচারিত এক ঘন্টার এই ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন আফসারা মির্জা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ওয়াইপিএফ-এর পক্ষ থেকে আফসারা মির্জা নারীর অবস্থান ও তদসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের কোভিডপূর্ব এবং কোভিডচলাকালীন অবস্থার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন।
এরই প্রেক্ষিতে ড. সেঁজুতি সাহা বলেন, ‘এখন আমরা যেসব বিষয়গুলোর সম্মুখীন হয়েছি, তার কোনোটিই নতুন নয়, অনেক আগের থেকেই এগুলো আছে। কিন্তু নারীর ওপর এসব বিষয়ের প্রভাব বোঝার ক্ষেত্রে কোভিড একটি ম্যাগনিফাইয়িং গ্লাসের মতো কাজ করেছে। তাই এসব এখন বাড়াবাড়িভাবে চোখে লাগছে।'
তার বক্তব্যে তিনি আমাদের দেশে বাড়ি ও চাকরিক্ষেত্রে নারীর প্রতি বিভিন্ন বৈষম্য ও নারীদের সামনে উপযুক্ত রোলমডেলের অভাবকেও তুলে ধরেন।
বাসা বুটিকের কর্ণধার রবিন সেফার্ট তার বক্তব্যে ঝুঁকিগ্রস্ত নারীদের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, নারীর প্রতি সহিংসতার একটি অর্থনৈতিক দিকও আছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণকল্পে তিনি বলেন, ‘একদম ছোট বয়স থেকেই ছেলেদের শেখানো হয় যে তাদের ক্ষমতা আছে। ছেলেরা কী শিখছে, শৈশব থেকেই নারীদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিয়মগুলো শিশুদের মাথায় শুধু পুরুষরাই ঢোকান না, নারীরাও তাই করেন, বলেন নাহেলা নওশিন। তার বক্তব্যে তিনি নারীর অবৈৎনিক গৃহস্থালি অবদানের মূল্যায়নের বিষয়টির ওপর তিনি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মনে করেন, এই বিষয়ে সত্যিকার পরিবর্তন আনার জন্য কেবল নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পদক্ষেপ নিলেই হবে না, বরং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে এ বিষয়ে আলোচনা হতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি তুলে ধরতে আরুশা রাহিম বলেন, দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ৭০%-ই নারী। এসব নারীদের মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের ক্ষমতাও নেই। ফলে তারাই জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বাপেক্ষা খারাপ প্রভাবের সম্মুখীন হতে পারে। চাকরিক্ষেত্রে নারীর জন্য সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে তাহানা তাসমিয়া বলেন, যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নারীর জন্য পরিবহনব্যবস্থা বা নারীবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে পারে, তাহলে নারীরা পুরুষশাসিত কর্মক্ষেত্রেও অধিক ক্ষমতায়িত অনুভব করবে।