advertisement
advertisement
advertisement.

টিআইবির গবেষণা
তথ্য প্রকাশে এগিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক
৬ আগস্ট ২০২১ ১২:০০ এএম | আপডেট: ৫ আগস্ট ২০২১ ১০:৫৬ পিএম
advertisement..

নাগরিকদের কাছে স্বপ্রণোদিত হয়ে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রায় ৯৫ শতাংশ বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) অবস্থান উদ্বেগজনক বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এক গবেষণা প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশে বেসরকারি সংস্থার চেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ চর্চার মূল্যায়ন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় টিআইবি। এ ছাড়া তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সরকারি-বেসরকারি

advertisement

প্রতিষ্ঠানের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশের চর্চা বৃদ্ধিতে সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গবেষণায় ১৫৩টি সরকারি ও ৩৯টি এনজির ওয়েবসাইটের ওপর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য প্রকাশে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক স্কোর পেয়েছে। একই ক্ষেত্রে ৯৪ দশমিক ৯ শতাংশ এনজিওর স্কোর উদ্বেগজনক, যেখানে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্কোর উদ্বেগজনক। অন্যদিকে জরিপের আওতাভুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় ৬৭ শতাংশ সন্তোষজনক স্কোর পেলেও কোনো এনজিও সন্তোষজনক স্কোর পায়নি। স্কোরের ভিত্তিতে প্রথম দশে অবস্থান করা সরকারি ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত স্কোর ৩৩ থেকে ৪২-এর মধ্যে ছিল। তথ্য প্রকাশে সর্বোচ্চ ৪২ স্কোর পেয়ে যুগ্মভাবে প্রথম অবস্থানে রয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় স্থানে আছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যুগ্মভাবে তৃতীয় স্থানে আছে কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেতু বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়- মাদ্রাসা বোর্ড, শিল্প মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪ স্কোর পেয়েছে আন্তঃবাহিনী নির্বাচন পর্ষদ।

অন্যদিকে কোনো এনজিও প্রথম ১০ অবস্থানে নেই, এমনকি গবেষণার মানদ-ে কোনো এনজিও-ই সন্তোষজনক স্কোর পায়নি। উল্টো ৯৪ দশমিক ৯ শতাংশ এনজিওর স্কোর উদ্বেগজনক। এনজিওদের মধ্যে প্রথম ১০ অবস্থানে রয়েছে ১৯টি প্রতিষ্ঠান, যাদের প্রাপ্ত স্কোর ৭ থেকে ২২-এর মধ্যে। সর্বোচ্চ স্কোর ২২ (৪৪ শতাংশ) পেয়ে প্রথম স্থানে আছে জাতীয় পর্যায়ের এনজিও কোস্টাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন, দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা আহসানিয়া মিশন ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে গণ-উন্নয়ন কেন্দ্র। প্রথম ১০ অবস্থানের মধ্যে ছয়টি আন্তর্জাতিক এনজিও এবং তালিকার বাকি সব ওয়েবসাইট জাতীয় পর্যায়ের এনজিওর। সার্বিকভাবে উদ্বেগজনক গ্রেডিংপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গড় স্কোর ৮ (শতকরা হার ১৫), অপর্যাপ্ত গ্রেডিংপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গড় স্কোর ২৭ (শতকরা হার ৫৪) এবং সন্তোষজনক গ্রেডিংপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গড় স্কোর ৩৭ (শতকরা হার ৭৫)।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য প্রবেশগম্যতা সন্তোষজনক হলেও ব্যাপ্তি ও উপযোগিতায় সন্তোষজনক নয়। ৬৭ শতাংশের বেশি স্কোর পেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলকভাবে ভালো করলেও আরও উন্নতি সম্ভব। অন্যদিকে এনজিওর ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানই সন্তোষজনক স্কোর পায়নি। প্রায় ৯৫ শতাংশ এনজিওর স্কোর হতাশাজনক। কেন তারা পিছিয়ে রয়েছে? বিষয়টি খুব বিব্রতকর। অথচ আমরা ভেবেছিলাম এনজিওগুলো আরও অনেক ভালো করবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক এনজিওর ক্ষেত্রেও তথ্য বিধিমালা অনুযায়ী তথ্য নেই। যেহেতু, বেসরকারি সংস্থাগুলো তথ্য অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত এবং তারা এর বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে কাজ করে, তাই তাদের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের চর্চা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।’

দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে তথ্য প্রকাশের গুরুত্ব তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলোর মধ্যে তথ্য প্রকাশ ও তথ্যের অভিগম্যতা নিশ্চিত করা অন্যতম হলেও দুর্নীতি প্রতিরোধে শুধু এটিই যথেষ্ট নয়। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দুর্নীতিতে যারা জড়িত তাদের কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিত করা, জনগণের অংশগ্রহণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা। তবে তথ্য প্রকাশ নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।’