সার্জেন্ট জহুরুল হক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি ও শহীদ ব্যক্তিত্ব। ১৯৩৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার সোনাপুর গ্রামে তার জন্ম। নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৬ সালে জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ইন্টারমেডিয়েড পাস করেন এবং ওই বছরই পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন। পরে ‘সার্জেন্ট’ পদে উন্নীত হন। ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর জহুরুল হককে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটকে রাখা হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলায় ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকেও গ্রেপ্তার করার হয়। মামলায় ৩৫ আসামির মধ্যে শেখ মুজিব ছিলেন ১ নম্বর ও সার্জেন্ট জহুরুল হক ১৭ নম্বরে।
সার্জেন্ট জহুরুল হক বন্দিনিবাসে থাকাকালীন তাকে প্রহরার দায়িত্বে নিয়োজিত পাকিস্তানি সৈনিকের হাতে থাকা রাইফেলের গুলিতে বিদ্ধ হন। ১৯৬৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ক্যান্টমেন্টে সৈনিকদের খাবারের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহের জন্য বাঙালি শিশুরা ভিড় করে। এতে অবাঙালি সৈনিকরা অভুক্ত কয়েক শিশুকে ধরে এনে বন্দিশিবিরের সামনে অমানবিকভাবে প্রহার শুরু করে। কয়েক বন্দি এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানালে হাবিলদার মনজুর শাহের সঙ্গে জহুরুল হক তর্কবিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন। পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে জহুরুল হক ঘর থেকে বের হলে মনজুর শাহ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলি তার পেটে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। জহুরুল হকের হত্যাকা- কেন্দ্র করে জনগণ প্রচ- আন্দোলনে ফুঁসে ওঠে। শেষ পর্যন্ত আইয়ুব সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় এবং শেখ মুজিবসহ সব বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন সার্জেন্ট জহুরুল হক।
(অধ্যায় এক : বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, সপ্তম শ্রেণি)