কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়েনি। উল্টো নানা সমস্যা নিয়েই চলছে প্রতিদিনের কার্যক্রম। জনবলসহ নানা সংকট রয়েছে হাসপাতালটিতে। গাইনিসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ অর্ধশতাধিক পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালের কোটি টাকার সরকারি যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সের বিল নিয়ে রয়েছে ভৌতিক বিলের অভিযোগ। কোনো রোগীর অবস্থা একটু জটিল মনে হলেই ময়মনসিংহ মেডিক্যালে প্রেরণের অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. সৈয়দ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ গালিব জুবায়ের, ডা. গোলাম সারোয়ার তারেক ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, ৩১ শয্যার কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৫ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন ত্যৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবলসহ বহু সংকট প্রথম থেকেই ছিল।
সংকটের চিত্র : হাসপাতালের ২৩৪ পদের ৬২টিই শূন্য। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থাকলেও শূন্য রয়েছে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের পদ ১টি, জুনিয়র কনসালটেন্টের (চর্ম ও যৌন) পদ ১টি, গাইনি সার্জনের পদ ১টি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পদ ১টি, জুনিয়র কনসালটেন্টের (শিশু) পদ ১টি, অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ পদ ১টি, কার্ডিও বিশেষজ্ঞ পদ ১টি, চক্ষু বিশেষজ্ঞ পদ ১টি, নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞ পদ ১টি, সহকারী সার্জন (অ্যানেসথেসিয়া) পদ ১টি, মেডিক্যাল অফিসারের পদ ১টি, মেডিক্যাল অফিসার (ইউনানী) পদ ১টি, মেডিক্যাল অফিসার (উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র) পদ ১২টি, নার্সিং সুপারভাইজার পদ ১টি, সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদ ১৪টি, সহকারী নাসের পদ ১টি, পরিসংখ্যানবিদের পদ ১টি, হিসাব রক্ষকের পদ ১টি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার এক্সিকিউটিভের পদ ৩টি, স্টোরকিপারের পদ ১টি, টিএলসিএর পদ ১টি, এসএসিএমওর পদ ৯টি, ফার্মাসিস্টের পদ ২টি, এমটি ল্যাবরেটরির পদ ২টি, এমটি (ডেন্টাল) পদ ১টি, কার্ডিওগ্রাফারের পদ ১টি, কম্পিউটার এক্সিকিউটিভের পদ ১টি, স্বাস্থ্য পরিদর্শকের পদ ২টি, স্বাস্থ্য সহকারীর পদ ৩৭টি, অফিস সহায়কের পদ ১১টি, ওয়ার্ড বয়ের পদ ১টি ও মালির পদ ১টি।
হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, জুনিয়র কনসালটেন্টের ১০টি পদের সবগুলোই শূন্য। জুনিয়র কনসালটেন্ট, গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া (শিশু) সার্জন না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন করা যাচ্ছে না। ফলে বহু যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। যদিও সিজারিয়ানের জন্য প্রেষণে ডা. শাহীন সুলতান নামে একজন এবং অ্যানেসথেসিয়ার জন্য ডা. নিজাম উদ্দিন নামে একজন এসেছেন।
সূত্র আরও জানায়, হাসপাতালের কোনো স্টোর রুম নেই। নেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা। হল রুম না থাকায় সভা-সেমিনার করতে সমস্যা হচ্ছে। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও অপারেটর না থাকায় রোগী সেবা পাচ্ছে না। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের (ল্যাব) ৩টি পদের মধ্যে মাত্র একজন কর্মরত রয়েছে। ফলে রক্ত সঞ্চালন কাজসহ-পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালের আরএমও নেই। তবে ইসিজি চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কেন্দুয়ায় করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ডা. গোলাম সারোয়ার তারেক বলেন, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ের জন্য কাজ করেও আমরা পয়েন্ট কম পাই। হাসপাতালে অন্তত আনসার দিলেও কিছুটা নিরাপত্তা পেতাম। জন্ম সনদ, প্রতিবন্ধী সনদ ইত্যাদির জন্য মানুষ না বুঝেই অনেক সময় আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। সব চেয়ে বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে করোনাকালীন টিকা প্রদানে। একসঙ্গে হাজার-বারোশ মানুষ টিকার জন্য ভিড় করেন। সে ঝক্কি সামাল দেওয়া বড় কষ্টের। হাসপাতালের সার্বিক বিষয় ও অভিযোগ প্রসঙ্গে গত ৭ নভেম্বর কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার এবাদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো সঠিক নয়।
আমাদের এখতিয়ারের বাইরে যেসব রোগী আসেন, তাদেরতো রেফার করতেই হবে। জনবল সংকটে সঠিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। তার পরও সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি। জানুয়ারি মাস থেকে আরও ডাক্তার সংকট দেখা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত আমরা লক্ষাধিক মানুষকে করোনার টিকা দিতে পেরেছি। যে কারণে নেত্রকোনা জেলার মধ্যে আমরা টিকাদানে প্রথম হয়েছি। এ কৃতিত্বের দাবিদার ডা. গোলাম সারোয়ার তারেক। হাসপাতালে প্রতিদিন এত মানুষের ভিড়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঠিক রাখা খুবই কঠিন বলেও জানান ডাক্তার এবাদুর রহমান।