অর্থপাচারকারীদের ব্যাপারে গৃহীত পদক্ষেপের ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গতকাল মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হলেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানিয়েছেন, একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে বিএফআইইউ। এ প্রতিবেদন নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করার পর বুধবার আদালতে দাখিল করা হতে পারে। তবে প্রতিবেদনের ব্যাপারে বিস্তারিত
তথ্য তিনি দেননি। এর আগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে নাম আসা বাংলাদেশি অর্থপাচারকারীদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান। বিএফআইইউ এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)কে ৯ জানুয়ারির মধ্যে এ তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ গত রবিবার হাইকোর্ট এ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এক সপ্তাহ সময় দেন।
বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সুইস ব্যাংকসহ গোপনে বিদেশে পাচারকরা অর্থ অবিলম্বে ফেরত আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস। এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বিবাদীদের চরম ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পানামা পেপারস এবং পেরাডাইস পেপারসে যাদের নাম আসছে তাদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করার জন্য বিবাদীদের প্রতি কেন নির্দেশ প্রদান করা হবে না এবং এ বিষয়ে প্রতি মাসে কেন অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
একই সঙ্গে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের অতীতের এবং বর্তমানে এ ধরনের অর্থপাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি স্পেশাল কমিটি গঠনের নির্দেশনা কেন প্রদান করা হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে অর্থপাচারকারীদের নাম-ঠিকানা ও তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চান আদালত। সে অনুযায়ী সিআইডির কাছে তদন্তাধীন ৮টি অর্থপাচার মামলার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন গত বছরের ১৭ অক্টোবর দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে দুবাই (সংযুক্ত আরব আমিরাত) সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ মোট ৬টি দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের তথ্য দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের তথ্যও রয়েছে এ প্রতিবেদনে। এ ঘটনায় অপরিচিত হ্যাকাররা অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর পর গত ডিসেম্বরে দুদক অর্থপাচারে জড়িত ৪৩ জনের একটি তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেন। পেরাডাইস পেপারসের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তার পরিবারের সদস্য নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়াল ও তাজওয়ার মো. আউয়ালসহ মোট ২৯ জনের একটি তালিকা দাখিল করা হয়। এ ছাড়া পানামা পেপারসে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জনের একটি তালিকা দাখিল করে দুদক। তবে পানামা পেপার্স ও পেরাডাইস পেপার্সে আসা বাংলাদেশি পাচারকারীদের নামের তালিকা ছাড়া তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে পারেনি দুদক।
তালিকা দাখিলের পর গত ৫ ডিসেম্বর শুনানিতে অংশ নিয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতে বলেন, বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, অফশোরসহ অন্যান্য কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন বা সম্পত্তি অর্জন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য মূলত বিএফআইইউ সর্বাধিক উপযুক্ত মাধ্যম। কিন্তু অভিযুক্তদের ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য বিএফআইইউর কাছে তথ্য চেয়ে পাওয়া যায়নি। পরে হাইকোর্ট বিএফআইইউ ও সিআইডির কাছে তথ্য চান।