শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বেশ কয়েকজন ছাত্র নয় দিন ধরে অনশন ধর্মঘট করেছেন। তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ঠাঁই পেয়েছেন। শুরুতে ছাত্রদের দাবি ছিল একটি ছাত্রীনিবাসের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ বা অপসারণ। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে তা রূপ নিয়েছে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে। এখন এই এক দাবিতেই তারা অটল। শিক্ষামন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে কাজ হয়নি। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুহম্মদ জাফর ইকবাল পানি পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়েছে। ফলে এমন অবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়া উচিত হবে না। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই সমাধানের লক্ষ্যে সংযত আচরণ করা জরুরি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের দূরত্ব তৈরি হওয়া কাম্য নয়। নির্বাহী পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্ব হতে পারে। কিন্তু তা যেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ককে কলুষিত না করে- সেদিকে সবার মনোযোগ জরুরি।
শিক্ষামন্ত্রী আলোচনার উদ্যোগ নিয়েও তা সফল হয়নি। এ মন্ত্রণালয়ে তিনজন মন্ত্রী রয়েছেন। পূর্ণমন্ত্রী নিজে না গিয়ে অন্য দুজন বা তাদের একজনকে আলোচনার জন্য পাঠাতে পারেন। উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল তৈরির জন্য সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও কয়েকজন সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি সিলেট গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রত্যেকের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে পারেন। আমাদের ধারণা এমন উদ্যোগই কার্যকর হবে। কেননা শিক্ষার্থীদের দাবি তো বিস্তারিত কিছু নয়, সবার মর্যাদা রক্ষা করেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। আমরা আশা করব, উপাচার্য বিবেকবান মানুষ হিসেবে নিজের সিদ্ধান্ত নেবেন এবং শিক্ষার্থীরাও যুক্তিপূর্ণ সমাধান মেনে নেবেন। এ ক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন, সংশ্লিষ্ট দুটি পক্ষের বাইরে তৃতীয় কোনো পক্ষের ভূমিকা কেবল মীমাংসার সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কী সরকারি, কী বেসরকারি- শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচিত সংসদ নেই। ইদানীং কোনো ছাত্র সংগঠনও আর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং অনেক সময় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন পুলিশের সহযোগীর ভূমিকা নিয়ে ছাত্রবিরোধী ভূমিকা পালন করে। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। আমরা মনে করি বর্তমান সমস্যার দ্রুত নিরসন করে ভবিষ্যতের জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্মুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ গঠন করা উচিত। এ কাজে প্রথম পর্যায়ে কিছু সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে গণতন্ত্র চর্চার সুফল সম্পর্কে সবাই সচেতন হবে এবং শিক্ষার্থী সম্পর্কিত যে কোনো জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলাও সহজ হবে।
আমরা সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত সমস্যার দ্রুত সমাধান কামনা করি। চাই ক্যাম্পাসে আবার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক।