আলোয় ঝলমলে পারফরম্যান্স উপহার দিলেন নাইম হাসান। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়লেন চট্টগ্রামের এই লোকাল বয়। ১০৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট শিকার করেন তিনি। এর আগে তার টেস্ট ক্রিকেটে ইনিংসে তার সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৫/৬১। নিজের সাফল্যের পেছনে সাকিবেরও প্রভাব ছিল বলে জানান নাইম। কোনো রকম বোলিং অনুশীলন ছাড়া খেলতে নেমে তিন উইকেট শিকার করেছেন সাকিব আল হাসান। ম্যাচ খেলার ব্যাপারে তাকে ঘিরে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। স্পিন বিভাগে সাকিব কতটা প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নাইম জানান, ‘সাকিব ভাই আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। সৌরভ ভাইও কথা বলেন। সৌরভ ভাই তো পুরো টিমের দায়িত্বে আছেন। সাকিব ভাই ছোট ছোট বিষয় বলে দেন। এখন এ রকম করতে হবে। এই ছোট ছোট বিষয় বলাতে আমাদের জন্য উপকার হয়।’
নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন নাইম। তবে নিজে সফল হওয়ার পর সাকিব ও তাইজুলের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন তিনি। জানালেন, এ দুজনই রান আটকানোর কাজ করেছেন। প্রথম দিন সেভাবে রান আটকিয়ে রাখার মতো বোলিং করতে পারেননি নাইম। কোচ ও সাকিব, মুমিনুলদের সঙ্গে পরামর্শ করেই দ্বিতীয় দিন সফল হয়েছেন এই তরুণ। স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছেন। বাংলা টাইগার্স দলের সোহেলের নাম উল্লেখ করে নাইম বলেন, ‘সোহেল স্যারের সঙ্গে কাজ করে নিজের উন্নতি করেছি। এখানে আসার পরও একই কথা। কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে সেটি বলেছেন।’
১৫ মাস পর টেস্ট ক্রিকেট খেলতে নেমে বাজিমাত করলেন নাইম। অথচ খেলার কথা ছিল না তার। শুরুতে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের স্কোয়াডেও ছিলেন না। প্রিমিয়ার লিগে খেলার সময় ফিল্ডিং করতে গিয়ে আঙুলে চোট পান মেহেদী হাসান মিরাজ। চোটগ্রস্ত মিরাজকে রেখেই প্রথম টেস্টের দল দিয়েছিলেন নির্বাচকরা। কিন্তু পরে ইনজুরির কারণে প্রথম টেস্ট থেকে ছিটকে যান মিরাজ। তাতেই নাইমের জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলে যায়। দলে মিরাজের স্থলাভিষিক্ত হন লম্বাদেহী এই স্পিনার। এবার একাদশে সুযোগ পেয়েই সাগরিকার উইকেটে জ্বলে উঠলেন এই অফস্পিনার। প্রথম দিন দুই উইকেট শিকার করে দলে স্বস্তি এনে দেন। দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের বোলিংয়ের গল্পজুড়ে নাইম। অসিথা ফার্নান্দোকে বোল্ড করে টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয় বারের মতো পাঁচ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন তিনি। যেভাবে বোলিং করেছেন- পাঁচ উইকেট প্রাপ্যই ছিল তার। এ কৃতিত্ব দেখানোর পর ম্যাথুসের হৃদয় ভেঙে দেন বাংলাদেশের এই তরুণ তুর্কি। ডাবল সেঞ্চুরি উদযাপনের অপেক্ষায় ছিলেন ম্যাথুস। কিন্তু এ সময় নাইমের বলে স্কয়ার লেগে সাকিবের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ফলে ১২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যক্তিগত ১৯৯ রানে আউট হলেন এই লংকান। এমন আলোকিত পারফরম্যান্স দেখানোয় জাতীয় দলে জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারবেন কি নাইম? অবশ্য সেটি টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন নাইম। মিরাজ দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছিলেন। তাই দলে জায়গা মিলছিল না নাইমের। তবে এ সময় নিজেকে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। আর সেটির ফলও পেলেন তিনি। বোলিংয়ের পরিকল্পনা কী ছিল? নাইম জানান, এখানে রান ছাড়া বোলিং করার পরিকল্পনা ছিল। ব্যাটিংয়ে নিজেকে উজাড় করে দিতে চান নাইম।