আগের দিন স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ জানিয়ে গিয়েছিলেন, দ্বিতীয় দিন শ্রীলংকাকে চারশ রানের মধ্যে আটকানোর লক্ষ্য তাদের। বোলাররা সেই কাজটি ঠিকঠাকমতো করেছেন। লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। শ্রীলংকা চারশ রানের মধ্যেই আটকে গেছে (৩৯৭)। আটকে গেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসও। মাত্র এক রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন না। তার হৃদয় ভাঙার গল্প রচনা করেছেন নাইম হাসান। ব্যক্তিগত ১৯৯ রানে যখন ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ম্যাথুস তখন অধিনায়ক মুমিনুল
নতুন করে ফিল্ডিং সাজান। বৃত্তের ভেতরে আনলেন ফিল্ডারদের। স্কয়ার লেগে দাঁড় করালেন সাকিবকে। নাইমের বল মারতে গিয়ে সাকিবের কাছে ক্যাচ দেন ম্যাথুস। ফলে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো ব্যাটসম্যান ব্যক্তিগত ১৯৯ রানে আউট হওয়ার দৃশ্য দেখল বিশ্ব।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এ নিয়ে ১২ জন ব্যাটসম্যান এমন আক্ষেপে পুড়েছেন। ১৯৯৭ সালে কলম্বোতে শ্রীলংকার কিংবদন্তি সনাৎ জয়সুরিয়াও মাত্র এক রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি পাননি। আরেক কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা ১৯৯ রানে আটকে যান। তবে এই দুই কিংবদন্তিকে ছাড়িয়ে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যক্তিগত ১৯৯ ও ৯৯ রানের আউট হওয়ার রেকর্ড গড়লেন ম্যাথুস। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র এক রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি তিনি। সেবার রানআউট হয়েছিলেন। নাইমের আগে ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ডিন এলগারকে ব্যক্তিগত ১৯৯ রানে আউট করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
দ্বিতীয় দিনশেষে বিনা উইকেটে ৭৬ রান তুলেছে বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ৩৫ ও মাহমুদুল হাসান জয় ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন। তাদের ব্যাট রানখরা কাটিয়ে ওঠার আভাস দিচ্ছে। গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্যাটিং ভালো হয়নি। তিন অঙ্কে পৌঁছানোর আগে দুবার ইনিংস গুটিয়েছে। এই হতাশা কাটিয়ে ওঠার মঞ্চ সাগরিকায় চলমান টেস্ট ম্যাচ। গতকাল ম্যাথুসের উইকেটটি শিকার করে দিনের আলো কেড়ে নেন নাইম হাসান। অবশ্য পাঁচ উইকেট শিকার করে আগে বাংলাদেশের বোলিংয়ের নায়ক বনে যান এই অফস্পিনার। মেহেদী হাসান মিরাজের অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠলেন চট্টগ্রামের এই তরুণ তুর্কি। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং উপহার দেন। ১০৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট শিকার করেন নাইম। এর আগে তার টেস্ট ক্রিকেটে ইনিংসে তার সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৫/৬১। কোনো রকম বোলিং অনুশীলন ছাড়া খেলতে নেমে তিন উইকেট শিকার করেছেন সাকিব আল হাসান। ম্যাচের আগে কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়া খেলতে নেমে সবচেয়ে কম রান দেন তিনি। এক উইকেট পান। গতকাল পেলেন দুটি। এ জন্য ৩৯ ওভারে ৬০ রান দেন সাকিব। গত দুই দিনে দারুণ বোলিং উপহার দিয়েছেন তিনি। বোলিংয়ে ভেরিয়েশন আনার চেষ্টা করেছেন। দুটি চায়নাম্যান ডেলিভারিরও চেষ্টা করেছেন এই অলরাউন্ডার। সকালের সেশনে নাইমের ছোবলের পর একই ওভারে দুই উইকেট শিকার করে শ্রীলংকাকে চাপে ফেলে দেন সাকিব। এর পর অসিথ ফার্নান্দোর উইকেটটি তুলে নিয়ে পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান নাইম। তবে বিশ্ব ফার্নান্দোকে নিয়ে ডাবল সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান ম্যাথুস। কিন্তু এই লংকানের হৃদয় ভেঙে দেন বাংলাদেশের তরুণ স্পিনার। তবে পুরো ইনিংসে যেভাবে ব্যাটিং করেছে ম্যাথুস- তাতে তার প্রশংসা করতেই হবে। নয় ঘণ্টার বেশি ব্যাটিং করেছেন। বাংলাদেশের বোলারদের ভুগিয়েছেন ম্যাথুস। গত দুই দিনে মেন্ডিসকে নিয়ে ৯২, চান্ডিমালকে নিয়ে ১৩৬, ফার্নান্দোকে নিয়ে ৪৭ রানের কার্যকর জুটি করে দলের রান চারশর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন তিনি। ডাবল সেঞ্চুরি না পেলেও যে ইনিংস খেলেছেন- সেটি যদি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৮ ওভার বোলিং করেছেন তাইজুল ইসলাম। ৪৮ ওভারে ১০৭ রান দিয়ে এক উইকেট শিকার করেন তিনি। সাকিবের পর তাইজুলই দলের পক্ষে সবচেয়ে কম খরুচে বোলার। দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলংকার প্রতিনিধি হয়ে আসা ম্যাথুস জানালেন, ৫০-৬০ রান কম হয়েছে তাদের। এখন বোলারদের ভালো করতে হবে। যদিও ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট এখনো অনেক ভালো।