রাজধানীর কামাঙ্গীরচরে কয়েকটি ওয়ার্ডের প্রায় এক লাখ আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (তিতাস)। এর মধ্যে অনেক বৈধ গ্রাহকও রয়েছেন। ফলে গ্যাসের অভাবে চুলা না জ্বলায় রান্না করতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছেন এসব ওয়ার্ডের মানুষ। অনেকে বিকল্প উপায়ে রান্নাবান্নার কাজ চালাচ্ছেন। গ্যাসের দাবিতে স্থানীয়রা প্রতিবাদ সমাবেশও করেছেন। এলাকাবাসী বলেছেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ খুঁজে বের করে তা বিচ্ছিন্ন করতে বৈধ গ্রাহকদের কোনোভাবেই ভোগান্তিতে ফেলতে পারে না তিতাস। যদিও তিতাস কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অটল। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত অবৈধ গ্যাস সংযোগ চিহিৃত করে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ গ্রাহকরাও গ্যাস পাবেন না।
কামরাঙ্গীরচরের স্থানীয়রা জানান, গত ১০ মে সন্ধ্যা থেকে তিতাস কর্তৃপক্ষ গোটা এলাকায় গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ফলে মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসী মাটির চুলা, কেরোসিনের চুলা, বৈদ্যুতিক রাইসকুকারসহ নানা বিকল্প উপায়ে রান্না করছেন।
কেন বৈধ অবৈধ সব গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে জানতে চাইলে গতকাল তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ মোল্লা আমাদের সময়কে বলেন, ‘যেসব এলাকায় বৈধ গ্রাহকের চেয়ে অবৈধ গ্রাহক অনেক বেশি সেসব এলাকায় গ্যাস সংযোগ
বিচ্ছিন্ন করা হবে। স্থানীয় মানুষের আরও সচেতন হওয়া উচিত। যে কোনো অবৈধ গ্রাহকদের প্রতিরোধ করা দরকার। কামরাঙ্গীরচরে মাত্র ১২ হাজার বৈধ গ্রাহক। সেসব গ্রাহকদের প্রায় ৮৩ কোটি টাকা গ্যাস বিল বকেয়া। এ ছাড়াও সেখানে প্রায় এক লাখ অবৈধ গ্রাহক রয়েছে। আবাসিক সংযোগ থেকে গ্যাস লাইন নিয়ে নানা ধরনের কারখানা, হোটেল চালানো হচ্ছে। কয়েকবার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করতে গেলেও সফল হওয়া যায়নি। ফলে পুরো এলাকার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হবে, ততক্ষণ বৈধ সংযোগ গ্রহণকারীরাও গ্যাস পাবেন না।
অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে শুধু কামরাঙ্গীরচরে পুরো এলাকার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনাই প্রথম নয়। এরও আগেও নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্চের কাঞ্চন এলাকায় অবৈধ গ্যাস নেওয়াদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বৈধ গ্রাহকদেরও লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। কাঞ্চনের একটি এলাকায় প্রায় এক হাজার বৈধ সংযোগের বিপরীতে প্রায় ১৫ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ পাওয়া গিয়েছিল। পরে প্রায় এক সপ্তাহ তিতাস পুরো এলাকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে। সর্বশেষ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাঞ্চন এলাকায় আবারও পুরানো সিন্ডিকেট অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে দিয়েছে।
এদিকে তিতাস সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার বিকালে কামঙ্গীরচর এলাকার তিনজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর তিতাস কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির এমডির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিচ্ছিন্নকৃত গ্যাস সংযোগ পুনরায় দেওয়ার বিষয়ে তিতাসের এমডিকে তারা অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে তিতাসের এমডি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বলেছেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া হবে না।
এভাবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দমন করতে না পরে বৈধ গ্রাহকদেরও গ্যাস বঞ্চিত করা যায় কিনা প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি বলেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে না পারার ব্যর্থতার কারণে বৈধ গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা বেআইনি। কারিগরি কারণে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হওয়া, বৈধ লাইনের অবৈধ ব্যবহার অথবা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিল পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া ছাড়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা গ্রাহকদের সঙ্গে বিতরণ কোম্পানির চুক্তির লঙ্ঘন।