প্রাথমিক স্তরের নতুন কারিকুলামে শ্রেণি পাঠদানের সময় বাড়ানো হবে। মাধ্যমিকের ন্যয়ে সাপ্তাহিক ছুটিও থাকবে দুই দিন। ইতোমধ্যে মাধ্যমিকের নতুন কারিকুলাম পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন (পাইলটিং) শুরু হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে শুরু হবে আগামী আগস্ট মাস থেকে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মাধ্যমিকের পুরো কারিকুলাম নতুন করে প্রণয়ন করা হয়েছে। আর প্রাথমিকের কারিকুলাম পরিমার্জন করা হয়েছে। পরিমার্জিত এই কারিকুলামে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ১০০ ভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। তবে চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। আর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্পকলা বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে ১০০ ভাগ।
নতুন পরিমার্জন বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মশিউজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের ক্লাসের সময় ‘একটু বাড়লে’ শিক্ষকদের সঙ্গে শিশুদের সর্ম্পকও একটু বেশি হবে। তিনি বলেন, তবে শিশুদের ওপর কোনো চাপ থাকবে না। কারণ পরীক্ষা থাকছে না, শিশুদের অ্যাক্টিভিটিসের ওপরই সবকিছু মূল্যায়ন করা হবে।
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। এক শিফটের বিদ্যালয়ে বিকাল সাড়ে ৩টা এবং দুই শিফটের বিদ্যালয়ে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম চলে। এর মধ্যে দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ হয়ে যায়।
তবে দাপ্তরিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকারি নানা দায়িত্বপালন করতে হয় প্রাথমিক শিক্ষকদের। এজন্য এক শিফটের বিদ্যালয় বিকাল সাড়ে ৩টা এবং দুই শিফটের বিদ্যালয় বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত খোলা রাখতে হয়।
নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। এই তিন শ্রেণিতে দৈনিক শিখন ঘণ্টা বাড়বে। এই স্তরে দৈনিক শিখন সময় সাড়ে তিন ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বর্তমানে তিন ঘণ্টারও কম। তবে চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মৌলিক বিষয়গুলোয় ৬০ শতাংশ ধারাবাহিক এবং ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। এই দুই শ্রেণিতে দৈনিক শিখন সময় বাড়ছে না, চার ঘণ্টাই থাকবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে সব মিলিয়ে বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে কর্মদিবস থাকবে ১৮৫ দিন। সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন থাকছে। বছরে মোট ছুটি থাকছে ১৮০ দিন। এ হিসেবে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে বছরে মোট ৬৪৭.৫ ঘণ্টায় শিখন কার্যক্রম হবে। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত- এ শ্রেণিতে বছরে মোট শিখন সময় থাকছে ৭৪০ ঘণ্টা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তথ্যানুযায়ী, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বর্তমানে মৌলিক বিষয় তিনটি- বাংলা, ইংরেজি ও গণিত। এ ছাড়া শারীরিক শিক্ষা বা সংগীত বা পরিবেশ পরিস্থিতি- এর যে কোনো একটি বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হয়। এ হিসেবে বর্তমানে দৈনিক (১৬০ মিনিট বা ৩ ঘণ্টার কম) ক্লাস হয়। আর তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বর্তমানে ৩টি মৌলিক বিষয়ের (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) পাশাপাশি আবশ্যিকভাবে বাংলাদেশ ও বিশ^ পরিচয় এবং ধর্ম বা নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হয়। এ ছাড়া শিল্পকলা বা শ্রুতি শিখন বা সংগীত, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ে যে কোনো একটি ক্লাস নেওয়া হয়।
এই নতুন কারিকুলাম পাইলটিং (পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন) চলতি বছরের আগস্টে শুরু হবে ৬৫টি বিদ্যালয়ে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পুরোপুরি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে এনসিটিবির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ৬৫টি বিদ্যালয়ের তালিকা ‘সদয় অনুমোদন’ প্রয়োজন।
৬৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪০টি, কিন্ডারগার্টেন (কেজি) ১৫টি, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ৮টি এবং উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে দুটি। এগুলোর মধ্যে শহর এলাকার ৩২টি এবং গ্রামাঞ্চল থেকে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করা হয়েছে।