মুখে এক, মনে আরেক। যাকে বলে ‘উপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’। শ্রীলংকার নতুন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জনতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ উঠেছে, ঘরে ও বাইরে। বিতর্কিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব আটকে দিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে ও তার দলীয় আইনপ্রণেতারা। সমালোচকরা বলছেন, জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে যে গোতাবায়া রাজাপাকসের বিরুদ্ধে তার দল অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব প্রকাশ্যে জানিয়েছিল, ক্ষমতা পেয়ে রং পাল্টে ফেলেছেন ইউএনপি নেতা।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরে শ্রীলংকা এখন সবচেয়ে বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক সংকট পার করছে। খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ- সব কিছুই ফুরিয়ে আসছে। বিদেশের কাছে ঋণখেলাপি অবস্থা।
এই আর্থিক দুর্দশার জন্য ক্ষমতাসীন শ্রীংলকা পিপলস ফ্রন্ট করোনা ভাইরাস মহামারীকে দায়ী করে আসছে, কারণ দেশটির পর্যটন খাত পুরোই ধসে পড়েছে এই মহাদুর্যোগে। তবে দেশটির বিরোধী শিবির ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা রাজাপাকসে পরিবারের ক্ষমতালিপ্সা ও আর্থিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে আসছেন।
সাধারণ জনতা জবাবদিহিতা দাবি ও রাজাপাকসেদের পদত্যাগ দাবিতে টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছিল। ৯ মে গণবিক্ষোভের কাছে নতি স্বীকার করে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তবে তার ছোট ভাই গোতাবায়া কিছুতেই পদত্যাগে রাজি নন।
রনিল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গতকাল সংসদ বসেছিল। বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা এমএ সুমাথিরা এদিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটগ্রহণের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু কলম্বোর আইনপ্রণেতা হর্ষ ডি সিলভা টুইটারে জানিয়েছেন, এই প্রস্তাব ১১৯-৬৮ ভোটে আটকে গেছে। তিনি লিখেছেন, ‘গোতাবায়া গদি ছাড়- বলে যে চিৎকারের রোল শোনা যাচ্ছে গোটা শ্রীলংকায়, তা ক্ষমতাসীন দল ও এর মিত্ররা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এমনকি নতুন প্রধানমন্ত্রীও তাদের দলে।’ এসজেবি দলের এ নেতার ভাষায়, এ এক ‘প্রহসন’।
এসজেবির যুব সংঘের প্রধান রেহান জয়বিক্রম টুইটারে লিখেছেন, রনিল বিক্রমাসিংহের ‘আসল চেহারা সবসময়ই দৃশ্যমান ছিল। তবে অনেকে এর আগে তার জ্ঞানগরিমার কাছে অন্ধ হয়ে ছিল।’
দেশের ভেতরেই শুধু নয়, বর্হিদেশেও নিন্দা কুড়াচ্ছেন ইউএনপি নেতা। লন্ডনভিত্তিক সংকট পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের শ্রীলংকা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক টুইট করেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নিজের নীতিও বেচে দিয়েছেন’ রনিল বিক্রমাসিংহে।