দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। আগের দিন সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার একই সময় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রোগটিতে নতুন করে ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ জনই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৩ জনে। যার মধ্যে ১০৮ জন ঢাকার এবং ৫ জন অন্যান্য জেলার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩ জুন পর্যন্ত রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩৫ জন। এর মধ্যে ৪৮৩ জনই চলতি জুন মাসে আক্রান্ত। অর্থাৎ চলতি মসে গড়ে প্রতিদিন ২১ জনের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর মৌসুম পূর্ববর্তী এডিস মশার জরিপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এ মশার ঘনত্ব অনেক বেশি। তাই এ বছর এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া ইতোমধ্যে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর বৃষ্টির জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে।
তাই উপযোগী পরিবেশ পেয়ে বাড়ছে এডিস মশা। সরকারিভাবে ডেঙ্গুর যে রিপোর্ট দেওয়া হয়, তা আক্রান্তের একটি অংশ মাত্র। যেখানে ১৫টি সরকারি এবং ৩২টি বেসরকারি হসাপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য থাকে। এর বাইরে যারা আক্রান্ত থাকেন তাদের তথ্য থেকে যায় পরিসংখ্যানের বাইরে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ম্যালেরিয়া নিমর্ূূল এবং এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সাবেক ডিপিএম ডা. এমএম আক্তরুজ্জামান বলেন, ‘সার্ভে রিপোর্টের তথ্যমতে মৌসুুমের আগেই বহুস্থানে এডিস মশা জন্ম নিতে দেখা গেছে। যা ছিল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি। এ সার্ভে থেকে এটাই প্রতিয়মান হয়, মৌসুমে ডেঙ্গু আরও বিস্তৃতি লাভ করবে; ইতোমধ্যে যা প্রতিয়মান। মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়ার ইলুমিনেশন হয়, কিন্তু ডেঙ্গুর ইলুমিনেশন নেই। তাই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কঠিনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে পড়ে থাকা ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার, পানির বোতল, ফুলের টব, ট্রে, মাটির পাত্র ইত্যাদিতে যেন পানি জমতে না পারে সেদিকে নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টার) বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন ১১ জন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, স্কয়ার হাসপাতালে এবং সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল এবং আদ দীন হাসপাতালে রোগী এসেছে দুজন করে। একজন করে রোগী ভর্তি হয়েছে উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, বারডেম এবং আজগর আলী হাসপাতালে। ঢাকার বাইরে মুন্সীগঞ্জে একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিলে ২৩ জন, মে মাসে ১৬৩ জন এবং জুন মাসের ২২ দিনে ৪৮৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা প্রাক মৌসুম এডিস মশা সার্ভে পরিচালনা করে। এতে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৫নং ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ মশার ঘনত্ব ২৩.৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া ৩৮ ও ৪০নং ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব ২০ শতাংশ। এসব এলাকায় পরিত্যক্ত কন্টেইনারে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ২৫.৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া জলমগ্ন মেঝে ও প্লাস্টিক কন্টেইনারে বেশি মাত্রায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনে এডিস মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে ২০ ও ৩২নং ওয়ার্ডে। এ দুটি এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ১৬. ৬৭ শতাংশ। এসব এলাকায় পরিত্যাক্ত কন্টেইনার, প্লাস্টিক ড্রামে এডিস মশার লার্ভা সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ২৩.১৯ শতাংশ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জলমগ্ন মেঝেতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে ২১.৭৪ শতাংশ।
প্রতি বছর বর্ষাকালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আক্রান্ত হয়েছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ২০২১ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয় এবং আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন।