ঝুঁকির মুখে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স
মেঘনা নদীর করালগ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে বরিশালের হিজলা উপজেলা সদরের নতুন নতুন এলাকা। প্রতিবছর মেঘনা নদীর ভাঙনের ফলে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে এ উপজেলা সদর। গত এক সপ্তাহে উপজেলা সদরের অন্তত ২০টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে বলে জানা গেছে।
চলতি বর্ষা মৌসুমে ভাঙনকবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়তে না পারলে পার্শ্ববর্তী মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নও মেঘনার এ ভাঙনে হারিয়ে যাবে অতিদ্রুত। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে- বড় ধরনের প্রকল্প ছাড়া এ জনপদকে রক্ষা আদৌ সম্ভব নয়।
বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, বাউশিয়া ৪১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ মেঘনায় বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পুরো ভবন। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে নদীগর্ভে গেছে কয়েকশত
একর জমি। বিগত ৪-৫ বছর ধরে হিজলা উপজেলার সদরের বাউশিয়া, বাহেরচর গ্রাম, পুরাতন হিজলা বন্দরের অনেকটাই নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে গৃহহীন হয়েছে কয়েক হাজার বাসিন্দা।
বর্তমানে বাউশিয়া গ্রামটি প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। মেঘনা ভেঙে উপজেলা পরিষদ ভবনের ২০০-৩০০ ফুটের মধ্যে চলে এসেছে। তাই উপজেলা পরিষদকে রক্ষার জন্য বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার বালুভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা চলছে। তবে জিও ব্যাগে বালুর বস্তা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ভাঙনকবলিত এলাকা বাউশিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ফকির, সুলতান ও বাকির হাওলাদার বলেন, সরকারের বরাদ্দ দেওয়া বালুভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে নদীভাঙন ঠেকানো যাবে না। স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য ব্লক বাঁধ দিতে হবে। তারা জানান, জিও ব্যাগে আদৌ বালু দেওয়া হচ্ছে, না কি কাদামাটি ভর্তি বস্তা নদীতে ফেলছে তা কেউ জানে না।
স্থানীয় বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন হাওলাদার জানান, মেঘনা ভেঙে তার পরিষদ ভবনের ৪০০ মিটার দূরত্বে চলে এসেছে।
হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, নদীভাঙন রোধে প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙন থেকে উপজেলাকে রক্ষার জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা একনেকে পাস হলে ভাঙন রোধ সম্ভব বলে জানিয়েছেন ইউএনও। তিনি আরও জানান, বর্তমানে নদীর তীরে কি কাজ এবং কারা বাস্তবায়ন করছেন তা আমার জানা নেই।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে (বাপাউবো) বরিশালের প্রধান প্রকৌশলী (পুর), (দক্ষিণাঞ্চল) মো. নূরুল ইসলাম সরকার জানান, বিগত কয়েকবছর ধরে মেঘনার ভাঙনে হিজলা উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকার অনেক জনপদ বিলীন হয়ে গেছে। পাউবো যখন যতটুকু সম্ভব হয়েছে অতিদ্রুত কার্যক্রমের আওতায় বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু বড় ধরনের বরাদ্দ ছাড়া এ জনপদকে রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।