রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন সম্পন্ন করতে সুইফটের বিকল্প হিসেবে ‘কারেন্সি সোয়াপ’ পদ্ধতির সুবিধা এখনই নেওয়ার পক্ষে নয় বাংলাদেশ। রাশিয়ার এ ধরনের প্রস্তাবটি আরও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর তা আরও পর্যালোচনা করে দেখার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত
হওয়া দুই কর্মকর্তা শাস্তি মওকুফের আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বৈঠকে পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপ চালুর প্রস্তাবটি আরও পর্যালোচনা করে দেখার কথা জানিয়েছে পর্ষদ। কারণ হুট করে রাশিয়ার সঙ্গে এ ব্যবস্থায় লেনদেন সম্পন্ন করা যাবে না। কেননা আমেরিকা ও ইউরোপ একদিকে। তাই এটি আরও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে নিষিদ্ধের পর বাণিজ্য সুবিধা বিবেচনায় এ পদ্ধতি ব্যবহারের বিষয়টি আলোচনা হচ্ছিল। জানা যায়, ইউক্রেনে হামলা চালানোর আগে থেকেই সুইফটে নিষিদ্ধ হওয়ার হুমকি পেয়েছিল রাশিয়া। সে কারণেই বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে নিজস্ব বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা ‘এসপিএফএস’ চালু করেছে দেশটি। সে সময়ে বাংলাদেশকেও ব্যাংকিং লেনদেনের বার্তা পাঠানোর এ বিকল্প ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তাতে সায় দেয়নি বাংলাদেশ। পরে এর পরিবর্তে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির বিষয়ে রাশিয়া থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতিতে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারেন্সি সোয়াপ চালু হলে এক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপর দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিপরীত মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট খুলবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকবে রাশিয়ান মুদ্রা রুবেলের হিসাব। অন্যদিকে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকবে টাকার হিসাব।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিসিটিভি অপারেটর পদের ২৬ শূন্য পদের জন্য ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ এই পদের জন্য লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও করোনার কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়। এর পর গত বছরের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৭০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নেন ১৪২ জন। উত্তীর্ণ হয় ২১ শতাংশ। উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় গত বছরের ৬ জানুয়ারি। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের তথ্য যাচাইকালে আবু বকর সিদ্দিক নামে এক পরীক্ষার্থীর হাতের লেখার গরমিল ধরা পড়ে। লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র ও নিজের হাতের লেখার মিল না থাকায় আবু বকর সিদ্দিককে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি স্বীকার করেন, তার পক্ষে অন্য কেউ পরীক্ষা দিয়েছেন। এর পর ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি বিশেষ তদন্তে নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, আবুবকর সিদ্দিকের পরিবর্তে নেত্তানন্দ পাল নামে একজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষায় এমন অনিয়মের পরিকল্পনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ। আর আবু বকর সিদ্দিক ও আবদুল্লাহ আল মাবুদের সঙ্গে নেত্তানন্দ পালের যোগাযোগ করিয়ে দেন অপর যুগ্ম পরিচালক মো. আলমাছ আলী। এ জন্য আলমাছ আলীর হিসাবে দুই লাখ টাকা জমা দেন আবু বকর সিদ্দিক। নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ ও মো. আলমাছ আলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৩ জুন দুই যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ ও মো. আলমাছ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ শাস্তির বিরুদ্ধে ওই দুই কর্মকর্তা আপিল করে। সেই আপিল আবেদন পর্ষদসভায় নাকচ করে দেওয়া হয়।
বৈঠকে আগামী অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি সম্পর্কে পর্ষদের মতামত নেওয়া হয়। আগামী ৩০ জুন নতুন এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর ফজলে কবির। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে চলমান মামলার অগ্রগতি পর্ষদ অবহিত করেছে বিএফআইইউ।