বাংলাদেশের দুই যুগ আগে যে সেতুর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল, সেই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ জেলা রাজধানী ঢাকা এবং বাকি অংশের সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হয়ে গেল। নিজেদের অর্থায়নে নির্মিত এ সেতু নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কারণ প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয় এটি দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের আবেগ অনুভূতির নাম।
পদ্মা সেতু আমাদের গর্ব। এটি বাংলাদেশ এবং আমাদের জাতির জন্য অনেক বড় সাফল্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য মনোবলের কারণে এবং বাংলার সকল মানুষের বিশ্বাসের জোরেই আমরা এ সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পেরেছি।
আমাদের বহুদিনের স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ শুভ উদ্বোধন হলো। সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থে এ সেতু নির্মিত হলেও এতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেক অবদান রয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের স্বনির্ভরতা ও সক্ষমতার প্রতীক হয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকবে। এই সেতু আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির কথা আমরা অনেকেই ভুলে গেছি, কিন্তু ঐ এলাকার মানুষ কখনোই ভুলবে না সেই ভয়াবহ লঞ্চ ডুবির কথা। এখনও লঞ্চ পারাপারের সময় অনেকেই পিনাক-৬ এর কথা স্বরণ করেন। দিনটি ছিল ২০১৪ সালের ৪ঠা আগষ্ট সেদিন ঈদের ছুটি কাটিয়ে শিকদার মেডিকেলের ছাত্রী নুসরাত জাহান হীরা ঢাকায় ফিরছিলেন। তার সেলফির সাথে ফেসবুক স্টাটাস ছিল 'গুড বাই শিবচর। হীরা সেদিন শুধু শিবচরকেই বিদায় জানায়নি, বিদায় জানিয়েছিলেন এই পৃথিবীকেই। সেদিন মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই পদ্মার তীব্র স্রোতে ভেসে গিয়েছিল অধিকাংশ মানুষ। এভাবে কত মানুষ হারিয়ে গেছে পদ্মার বুকে তাদের খবর কয়জনই বা রাখে?
এই সেতু নির্মাণের পেছনে রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জ ও বাধা-বিপত্তির গল্প। কত জটিলতার পরও প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বছরের পর বছর যারা এ পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিলেন তাদের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ ও আহবান একবার হলেও বাংলার গৌরব স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখে আসুন। এতে আপনিও গর্ব বোধ করবেন।