বন্যায় দেশের অনেক জেলার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এখন বিপর্যস্ত। যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ দেশে আমাদের বসবাস, সেহেতু দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। খরা, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, নদীভাঙন- এসব সামাল দিয়েই আমাদের নিত্যপথচলা। কয়েকদিন আগে টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল লাখো মানুষ। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারসহ সব নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। এখন সিলেটে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি নামছে খুব ধীরে। সুরমা নদীর পানি কমলেও কুশিয়ারার পানি অপরিবর্তিতভাবে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার পানি নামার ধীরগতির কারণে সিলেট নগরবাসী পড়েছেন বহুমুখী ভোগান্তিতে। মূল সড়কগুলো থেকে পানি নেমে গেলেও পাড়া-মহল্লার ভেতরে পানি জমে আছে। এসব পানিতে ময়লা জমে কালো রঙ ধারণ করেছে। বাসিন্দারা এসব পানি মাড়িয়েই চলাফেরা করছেন। নগরের ছড়া, খালগুলোয় ময়লা-আবর্জনা পড়ে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এতে ছড়াচ্ছে নানা রোগ। বিশেষ করে ওসমানী হাসপাতালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা না থাকায় চিকিৎসাসেবা বিঘিœত হচ্ছে। এ জন্য ভবিষ্যতে এমন জলাবদ্ধতা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এখন থেকেই করতে হবে। আর স্বাভাবিকভাবে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় প্রথমেই দেখা দেয় মানবিক বিপর্যয়- খাদ্য ও পানীয় জলের অভাব, বাসস্থান সংকট, সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সংক্রামক রোগও। তাই প্রচুর পরিমাণ খাওয়ার পানি, শুকনা খাবার, খাওয়ার স্যালাইন ও অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্রের ব্যবস্থা করতে হবে।
সরকারি ত্রাণ যেন প্রকৃত বন্যাকবলিত দুর্গত ব্যক্তিরা পান। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম ঘটলে কঠোরভাবে তা দমন করতে হবে। শুধু বন্যার সময় নয়, বন্যা-পরবর্তীও সরকারের অনেক করণীয় রয়েছে। যেসব মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বন্যাদুর্গত বিপন্ন মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবেন দলমত নির্বিশেষে সবাই- এটিই আমাদের প্রত্যাশা।