বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন আবরার ফাইয়াজ। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় হয়েছেন ৪৫০তম। পেয়েছেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।
আবরার ফাইয়াজ বুয়েটের খুন হওয়া ছাত্র আবরার ফাহাদের ছোট ভাই। ফাইয়াজ এখনো নিশ্চিত নন দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠে ভর্তি হবেন কি না। দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বুয়েটে ভর্তিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাকির হোসেন তমাল।
বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন, নিশ্চয় ভর্তি হচ্ছেন?
আবরার ফাইয়াজ : বুয়েটে ভর্তির বিষয়ে পরিবারের অনেকেই দ্বিধান্বিত। পরিবারের বেশিরভাগ মানুষ বুয়েটে ভর্তি করানোর পক্ষে নয়। আম্মুর ইচ্ছা নেই। তবে আব্বুর মোটামুটি ইচ্ছা আছে। আমার দাদা বৃদ্ধ মানুষ, উনিও বুয়েটে পড়ানোর একদমই পক্ষে না। আমার চাচারাও কেউ খুব একটা পক্ষে না। আইইউটিতে সিএসসিতে ভর্তি আছি। পরিবারের লোকজন বলেছে, ওখানেই পড়াশোনা করতে।
বুয়েটে পড়তে না দেওয়ার কারণ কী?
আবরার ফাইয়াজ : প্রধান কারণ ওখানে গেলে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ব কি না, ভেঙে পড়ব কি না।
এ বিষয়ে আপনার মত কী?
আবরার ফাইয়াজ : খারাপ লাগবে—এটা সত্য। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। তবুও আমি আশা করছি, আমি টিকে থাকতে পারব। আল্লাহ সাহায্য করলে সমস্যা হবে না।
অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন?
আবরার ফাইয়াজ : মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) চান্স হয়েছিল। কিন্তু ভর্তি হইনি। গাজীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হয়েছি। আর কোথাও এখনো রেজাল্ট দেয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছি, সেটার রেজাল্ট আগামী পরশু দিন দেবে।
যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান, পড়বেন?
আবরার ফাইয়াজ : না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই। কারণ বাংলাদেশে পড়তে গেলে তুলনামূলক ভালো জায়গায় পড়ব। মোটামুটিভাবে দুটো ভাবনা-চিন্তার মধ্যে আছে। একটি আইইউটি, আরেকটি হচ্ছে বুয়েট। কারণ বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির ব্যাপার আছে। আমার আসলে রাজনৈতিক কোনো পরিবেশে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
বুয়েটে আপনার ভাইকে নিয়ে একটা কষ্টের স্মৃতি আছে…
আবরার ফাইয়াজ : আমি যেখানে যাব, সেখানেই ভাইয়ের স্মৃতি মনে হবে। হয়তো বুয়েটে ভর্তি হলে সেটা বেশি মনে হবে। কিন্তু আমার আসলে কিছু করার নেই। পেছন ফিরে আর কতদিন থাকা যায়? তিন বছর তো লুকিয়ে-পালিয়ে থাকা হলো। তাই না! আর কতদিন? একটা না একটা দিন তো সামনে আসতেই হবে। এ জন্যই আসলে চিন্তা-ভাবনা। হয়তো প্রথম কিছুদিন খারাপ লাগবে। এরপর হয়তো আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে।
পড়াশোনা নিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তা কী
আবরার ফাইয়াজ : আমার একটাই ইচ্ছা, বাংলাদেশের বাইরে যেতে হবে, যেভাবেই হোক। আমি বিএসসি করে বাইরে যেতে চাই। আবার এখন যদি সুযোগ পাই বা সামনে সুযোগ পাই, বাইরে চলে যেতে পারি। তখন বিএসসিও করব না হয়তো।
কোন দেশে যেতে চান?
আবরার ফাইয়াজ : ওয়েস্টার্ন দেশগুলো। ইউরোপ বা আমেরিকা। এইচএসসির পর গ্র্যাজুয়েশন লেবেলে বাইরে পড়াশোনা জটিল এবং অনেক ব্যয়বহুল। এ জন্য ওই সময় চিন্তা-ভাবনার মধ্যে ছিল না।
আপনার প্রধান লক্ষ্যই উচ্চতর ডিগ্রি নিতে বাইরে যাওয়া?
আবরার ফাইয়াজ : হ্যাঁ। উচ্চতর শিক্ষার জন্য বাইরে চলে যাওয়া।
বিদেশে উচ্চতর পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরতে চান, নাকি সেখানেই থাকবেন?
আবরার ফাইয়াজ : না। আমার আসলে দেশে ফেরার খুব একটা ইচ্ছে নেই।
এ ধরনের ইচ্ছা কেন?
আবরার ফাইয়াজ : এখানে অনেক দিন থেকে অনেক কিছু তো দেখেছি। কী বলব, আমার ভাইয়ার ক্ষেত্রে দেখেছি। তার মতো একজন শান্তশিষ্ট মানুষের যে অবস্থা হয়েছে। সেখানে আমি বাইরে গিয়ে সেটেলড হতে পারলে আমার পরিবারকে নিয়ে যেতে পারব। ভবিষ্যতের একটা নিরাপত্তা থাকে। ভাইয়ার ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে বাইরে চলে যাওয়া। আমার আসলে ছোট থেকে বাংলাদেশের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না, ভাইয়া মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত। ভাইয়া মারা যাওয়ার পর আমার বাইরে যাওয়ার ইচ্ছাটা জন্মেছে।
ভাইয়া মারা যাওয়ার পর এখনো কত মানুষ কত উল্টা-পাল্টা কথা বলে। মানুষের মানসিকতা অন্যরকম। হয়তো অনেক মানুষই আমাদের পক্ষে, মানে তারাও হয়তো সমব্যথী। কিন্তু একটা বড় পার্সেন্টেজের মানুষ যাদের চিন্তা-ভাবনা আমাদের সঙ্গে মেলে না।
মাঝে মাঝে লোকজন বিভিন্ন ধরনের কথা বলে। ছাত্র সংগঠনের অনেকে আছে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করে। ডিরেক্টলি কেউ বলতে পারে না। কিন্তু ইন-ডিরেক্টলি বলে ‘তোমার ভাইয়ের মতো হইও না বা এসব করো না। একই ধরনের কাজ করলে একই ধরনের পরিণতি হতে পারে।’ এ ধরনের কথা বলে।
ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই
আবরার ফাইয়াজ : রাজনীতিবিষয়ক কিছুই আমার পছন্দ না। শুধু ছাত্র রাজনীতি নয়, কোনো রাজনীতিই পছন্দ নয়। আর বাংলাদেশে তো রাজনৈতিক ব্যাপারগুলো অনেক বড় বড়। আমার এগুলো ভালো লাগে না।
কেন রাজনীতি পছন্দ করেন না?
আবরার ফাইয়াজ : আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তো খুবই খারাপ। আমার কাছে যেটা মনে হয়, সব জায়গায় রাজনীতি করণের জন্য পরিস্থিতিটা এত বেশি খারাপ হয়েছে। আমি যদি বাংলাদেশে থাকি, হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করতে যাই, সেক্ষেত্রে সৎভাবে চাকরি করার সুযোগ খুবই কম, আমার কাছে তাই মনে হয়।
বাইরের দেশে থেকে ভিতটা শক্ত করতে পারলে সেক্ষেত্রে হয়তো দেশের জন্য কিছু করতে পারবেন। হয়তো মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবেন। তাছাড়া আমার ক্ষেত্রে যেটা মনে হয়েছে, বাংলাদেশে থেকে রাজনীতি না করে খুব একটা ভালো কিছু করার অপশন আছে। রাজনৈতিক মানুষের ওপর আর কারও কোনো গুরুত্ব নেই।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আবরার ফাইয়াজ : আপনাকেও ধন্যবাদ।