আমাদের সময় : বেইজিংয়ের বারবার বারণ সত্ত্বেও মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বহুল বিতর্কিত তাইপে সফর সারলেন। ক্ষোভ ঝাড়তে তাইওয়ানে চীনের সামরিক আগ্রাসন চালানোর আশঙ্কা কতটুকু?
মারিয়া রায়ান : চীনের মন পড়া অত সোজা নয়। তার পরও আমি বলব, এই মুহূর্তে চীনের সামরিক আগ্রাসনের আশঙ্কা তেমন একটা নেই।
আমাদের সময় : কী কারণে আপনার মনে হচ্ছে, তাইওয়ানে চীন সামরিক হামলা করবে না?
মারিয়া রায়ান : কেননা, ঘর গোছাতেই মরি-মরি করছে চীন, বাহির বেসামাল করার ফুরসত তাদের নেই। বিশেষ করে কোভিড মহামারী নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বেশ চাপে আছে চীন। এ ছাড়া প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে তারা জাতীয় সংকটে রয়েছে। আমি মনে করি, [চীনের প্রেসিডেন্ট] শি জিনপিং বরং জাতীয় স্থিতিশীলতাকেই অগ্রাধিকার দেবেন।
আমাদের সময় : তাইওয়ানের সঙ্গে ১৯৫৪ সালে প্রতিরক্ষা সমঝোতা করে পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পর, তাইওয়ানকে যে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল, পরে সেটিও বাতিল করে দেয় ওয়াশিংটন। ১৯৭৯ সালের তাইওয়ান সম্পর্ক নীতি তাইওয়ানকে রক্ষায় কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে?
মারিয়া রায়ান : দেখুন, তাইওয়ানকে রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কখনই সরাসরি অঙ্গীকার করেনি। ১৯৭৯ সালের তাইওয়ান সম্পর্ক নীতি (তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট) অনুযায়ী, তাইওয়ানের চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রতিরক্ষা অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম তাইপেকে দিতে
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ওয়াশিংটন। তাত্ত্বিকভাবে, এ নীতির উদ্দেশ্য হলো, চীনের সম্ভাব্য সামরিক আগ্রাসনকে রুখে দেওয়া। এ মুহূর্তে এমন অভিপ্রায় অনেকখানি অবাস্তব বলে মনে হতে পারে। কিন্তু ওই সময়ের কথা বিবেচান করুন, ১৯৭৯ সালে চীনের সেনাবাহিনী এখনকার চেয়ে অনেক গুণে দুর্বল ছিল।
আমাদের সময় : তাইওয়ান আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দ্বীপটিকে সামরিকভাবে সাহায্য করবে?
মারিয়া রায়ান : যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত নীতি হলো, দেশটি তাইওয়ানকে রক্ষায় প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করবে কিনা, কিংবা চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধে সরাসরি জড়াবে কিনা, ওয়াশিংটন তা খোলাখুলি বলে রাখেনি। একটা ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছে, ইচ্ছে করেই। একে বলা হয়, ‘কৌশলগত অস্পষ্টতা’। এর সুবিধা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব পড়তে না পারায় চীন সামরিক আগ্রাসন চালাতেও পারছে না। এ জন্য এ নীতি বেশ প্রশংসিত, বিশেষ করে এ কৌশলী নীতির কারণে ৪৩ বছর ধরে শান্তি ধরে রাখা গেছে।
আমাদের সময় : আপনি কি মনে করেন, ঘর ও বাহিরের বারণ উপেক্ষা করে তাইপে গিয়ে নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিলেন ন্যান্সি পেলোসি?
মারিয়া রায়ান : মোটেও নয়। কারণ, পেলোসিকে হত্যা করা মানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করা। যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো জরুরি অবস্থায় যিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, তিনি সেই তালিকায় দ্বিতীয়।
আমাদের সময় : যুদ্ধ বাঁধানো কিংবা যুদ্ধ এড়ানোয় কৌশলগত নেতা হিসেবে কে এগিয়ে- রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমের পুতিনের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং?
মারিয়া রায়ান : আমি এই উত্তরটা না করি। বরং রাশিয়া ও চীন বিশেষজ্ঞরাই এ নিয়ে কথা বলুক।
আমাদের সময় : অদূর আগামীতে তাইওয়ান স্বাধীনতা লাভ করে গণতন্ত্র চর্চা করছে, এমন কোনো স্পষ্ট ছবি কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন?
মারিয়া রায়ান : না। খেয়াল করবেন, তাইওয়ান কিন্তু কখনই স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি। কারণ, তাইপে জানে, স্বাধীনতা ঘোষণা করা মানেই মহাবিপদ ডেকে আনা- চীনের সামরিক আগ্রাসনকে এক রকম আমন্ত্রণ জানানো। এবং এখনো এটাই পরিস্থিতি। তাইওয়ানকে কোনোদিনই স্বাধীন হতে দেবে না বেইজিং। ফলে, কোন ভবিষ্যতে তাইওয়ান স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ হবে- সেই দিন দেখার স্বপ্ন কেবল কল্পনার মতো লাগে।
আমাদের সময় : তাৎপর্যময় বিশ্লেষণ ও মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
মারিয়া রায়ান : আশা করি, কথা বলতে পেরেছি। আপনাকে ধন্যবাদ।