বগুড়ায় ধান-চাল সংগ্রহের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বর্তমানে হাটবাজারে দাম বেশি। এ কারণে এবারও বোরো ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কৃষকরা বলছেন, বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় তারা সরকারি গুদামে ধান দিচ্ছেন না। অন্যদিকে মিলাররা বলছেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় লোকসান হলেও বাধ্য হয়ে চাল দিতে হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, সব কিছুর পরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সংগ্রহ অভিযান সম্পন্ন হবে।
সরকারি হিসাবে বগুড়ায় এবার ৮৯ হাজার ৪০৫ টন বোরো ধান-চাল সংগ্রহ করবে জেলা খাদ্য বিভাগ। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৩৬১ টন বোরো ধান ও ৬১ হাজার ৬০০ টন চাল। খাদ্য বিভাগ এবার ধান ক্রয়ে ২৭ টাকা কেজি ও চাল ৪০ টাকা
কেজি নির্ধারণ করেছে। গত ৭ মে খাদ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ধান-চাল সংগ্রহের উদ্বোধন করেন।
এদিকে বগুড়ায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই সংগ্রহ অভিযান শতভাগ সফল হবে বলে আশা করছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
জেলা খাদ্য ও কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ২৫ শতাংশ আর্দ্রতা যুক্ত (ভেজা) ধান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ এবং ২২ শতাংশ আর্দ্রতা যুক্ত ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার ২০ টাকা মণ।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কর্ণফুলী রাইস মিলের ব্যবস্থাপক জামাতুল আমীর বলেন, আমাদের বর্তমানে বাজার থেকে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা মণ দরে ধান কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার বাছাই ছাড়া চাল নিচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রতি কেজি চাল ৪০ টাকার ওপর পড়ে যাচ্ছে।
উপজেলার জামুরহাটের কৃষক লোকমান হোসেন বলেন, সরকারি গুদাম বা মিলারদের চেয়ে হাট-বাজারে ধানের দাম বেশি পাচ্ছি। যার কারণে আমরা মিলারদের না দিয়ে বাজারেই ধান বিক্রি করে দিচ্ছি।
এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, খাদ্য গুদামের শর্ত জটিলতায় সেখানে ধান বিক্রি করতে সমস্যায় পড়েন প্রকৃত কৃষকরা। সরকারি দামে গুদামে ধান দিতে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ ময়েশ্চারাইজার বা আর্দ্রতা নিশ্চিত করতে গিয়েও বিপাকে পড়েন প্রান্তিক চাষিরা। আর্দ্রতা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় তারা এ ঝামেলায় পড়েন।
বগুড়া সদর উজেলার নামুজা থ্রিস্টার অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, বাজারের ধান-চালের দাম বেশি হওয়ায় কারণে অনেকে সরকারকে চাল দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। তারপরও যেহেতু সরকারের সঙ্গে চুক্তি করা আছে- লাভ, লস যাই হোক চাল তো দিতেই হবে।
শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ি এলএসডির খাদ্য পরিদর্শক কাজী হাসিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের ১ হাজার ৪৪২ টন ধান কেনার টার্গেট ছিল। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বাজারে ধানের মূল্য বেশি হওয়ায় এ পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক এনামুল হক জানান, জেলায় এবার ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এখান থেকে সোয়া ৮ লাখ টন বেশি চাল উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান জানান, এবার বগুড়া এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৮৬৬ টন ধান এবং ৩৮ হাজার ৩১২ টন চাল কেনা হয়েছে। গত তিন মাসে এ জেলায় মাত্র সাড়ে ৬৪ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তবে আমরা আশা করছি আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে বাকি ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারব।