advertisement
advertisement
advertisement.

বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস এবং বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

মো. আবু সালেহ আলমগীর
৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৩২ পিএম | আপডেট: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৪৪ পিএম
প্রতীকী ছবি
advertisement..

৮ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। ১৯৫১ সাল থেকে সারাবিশ্বে ফিজিওথেরাপি দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর দিবসটির গুরুত্ব অনেক গুণ বেড়ে যায়। বিশ্বের ১২১টি দেশে একযোগে এই দিনে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর ‘বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস’ পালন করা হয়।চিকিৎসা ব্যবস্থায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের ভূমিকা ও অবদান সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যেই দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আগেকার দিনে মানুষ সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার অভাবে মারা যেত, কষ্ট পেত কিংবা পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতো। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই শাখাটি আবিষ্কারের ফলে মানুষ পঙ্গুত্বকে জয় করেছে। সেই সঙ্গে কাটাচ্ছে বাত ব্যথা ও প্যারালাইসিস মুক্ত সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব।

advertisement

ফিজিওথেরাপি একটি ইংরেজি শব্দ। এখানে ফিজিও শব্দের অর্থ শারীরিক এবং থেরাপি শব্দের অর্থ চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপি অর্থ হচ্ছে শারীরিক চিকিৎসা পদ্ধতি। ১৯১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের একদল স্বাস্থ্যকর্মী তাদের দেশে চিকিৎসা সেবায় প্রথমবারের মতো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার কার্যক্রম শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা শুরু হয় ১৯১৪ সালে। এরপর শুরু হয় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে গবেষণা।

১৯২১ সালে ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট অ্যাসোসিয়েশন গঠন করে পঙ্গুদের পুনবার্সনের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক শাখার নাম ‘ফিজিওথেরাপি’ বলে ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক মেরি এমসি মিলান। জিওরজিয়া ওয়ার্ম স্প্রিং ফাউন্ডেশন পোলিও রোগ নিয়ে কাজ শুরু করে ১৯২৪ সালে। এক পর্যায়ে ফাউন্ডেশনটির অন্যতম কর্মী কিননি পোলিও চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি অন্তর্ভুক্ত করেন।

এরপর থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা হয়ে ওঠে পোলিও রোগীদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসার মূল পদ্ধতি। ১৯৫০ সালে পঙ্গুত্ব ও বাত-ব্যথা এবং প্যারালাইসিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপির সঙ্গে নিউরোলজি, অর্থোপেডিকস, কাইনেশিওলজি, হাইড্রোথেরাপি, ক্রায়োথেরাপি সংযুক্ত করা হয়।

১৯৮০ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বাত-ব্যথা ও প্যারালাইসিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপিতে যোগ করেন ইলেক্ট্রিক্যাল স্টিমুলেশন, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, আল্ট্রাসাউন্ড, মাইক্রো ওয়েভ, ইনফ্রারেড রেডিয়েশন, আল্ট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ, ওয়াক্স বাথসহ ফেরাডিক ও গ্যালভানিক কারেন্ট ইত্যাদি। ফিজিওথেরাপিতে এই অংশটির নাম দেয়া হয় ইলেক্ট্রোথেরাপি।
১৯৯০ সালে ফ্রেডি কেলর্টেনবর্ন নামের একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ম্যানুয়েল থেরাপির বিভিন্ন ধারা ব্যবহার করে রোগীকে সুস্থ করে তোলার মধ্য দিয়ে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বাত, ব্যথা প্যারালাইসিস ও স্পোর্টস ইনজুরির চিকিৎসায় অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাই বর্তমানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত একমাত্র উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবসানের পর হাজার হাজার যুদ্ধাহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন বিভিন্ন দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এনে সাময়িকভাবে চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করা হয়। জরুরি ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ফিজিওথেরাপি সিলেবাসের সমন্বয়ে একটি আধুনিক সিলেবাস প্রণয়ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদ বা মেডিসিন ফ্যাকাল্টির অধীনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এ বিষয়ে ব্যাচেলর কোর্স চালু করা হয়। ১৯৭৩ সালে ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে আর-জে গাস্টের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শিক্ষার ব্যাচেলর ডিগ্রি চালু করা হয়। তখন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টি হতে এমবিবিএস (মেডিকেল), বিডিএস (ডেন্টাল) এর ন্যায় বিপিটি (ফিজিওথেরাপি) বিষয়ে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি বা ব্যাচেলর ডিগ্রির অগ্রযাত্রা শুরু হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ফিজিওথেরাপি শিক্ষার ব্যাপকতা উপলব্ধি করে বর্তমানে আরও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিষয়ে স্নাতক বা ব্যাচেলর ডিগ্রি অধ্যয়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বর্তমানে ফিজিওথেরাপির ওপর ব্যাচেলর (বিপিটি) ডিগ্রির পাশাপাশি পোস্ট গ্রাজুয়েশন (পিজিডি), মার্স্টাস (এমপিএইচ, এমপিটি, এমডিএমআর) পিএইচডি ডিগ্রি চালু হয়েছে। অন্যদিকে ফিজিওথেরাপির উপর ডিপ্লোমা (ডিপিটি), সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে। সুতরাং ফিজিওথেরাপি জনিত রোগীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ব্যতীত অন্য কোনো কনসালটেন্ট ও চিকিৎসকের প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের অন্য কোনো চিকিৎসকের অধিনস্ত হওয়ার ও প্রয়োজন নেই। কেননা ফিজিওথেরাপি জনিত চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য রয়েছে ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক (বিপিটি), ফিজিওথেরাপি অ্যাসিসটেন্ট (ডিপিটি) ও ফিজিওথেরাপি টেকনিশিয়ান। মেডিকেল চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রয়েছে মেডিকেল কনসালটেন্ট, মেডিকেল চিকিৎসক (এমবিবিএস), মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট (ডিএমএ) এবং পল্লী চিকিৎসক (এলএমএএফ)। অন্যদিকে, ডেন্টাল চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রয়েছে ডেন্টাল কনসালটেন্ট, ডেন্টাল চিকিৎসক (বিডিএস), ডেন্টাল অ্যাসিসটেন্ট (ডিডিএ) ও ডেন্টাল টেকনিশিয়ান।

রোগীদের সঠিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য এক প্রফেশনের চিকিৎসক অন্য প্রফেশনের চিকিৎসা প্রাকটিস করার কোনো অধিকার নেই। এজন্য তারা রোগীকে সুনির্দিষ্ট কনসালটেন্ট ও চিকিৎসকের কাছে রেফার করবেন। এটাই হলো মেডিকেল ইথিকস। রোগী সাধারণের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে মেডিকেল চিকিৎসকদের মধ্যে মেডিকেল কনসালটেন্ট ও মেডিকেল চিকিৎসকরাই কেবল ডা. শব্দটি তাদের নামের আগে ব্যবহার করতে পারবেন। মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ও মেডিকেল টেকনিশিয়ানরা পারবেন না। এজন্য তাদের রয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল কাউন্সিল বা বিএমসি। অন্যদিকে, ডেন্টাল চিকিৎসকদের মধ্যে ডেন্টাল কনসালটেন্ট ও ডেন্টাল চিকিৎসকরাই কেবল ডা. শব্দটি তাদের নামের আগে ব্যবহার করতে পারবেন। ডেন্টাল অ্যাসিসটেন্ট ও ডেন্টাল টেকনিশিয়ানরা পারবেন না। এজন্য তাদের রয়েছে বাংলাদেশ ডেন্টাল কাউন্সিল বা বিডিসি। অপরদিকে, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের মধ্যে ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরাই কেবল তাদের নামে আগে ডা. শব্দটি ব্যবহার করতে পারবেন। ফিজিওথেরাপি অ্যাসিসটেন্ট ও ফিজিওথেরাপি টেকনিশিয়ানরা পারবেন না। এজন্য তাদের রয়েছে বাংলাদেশ রি-হ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল বা বিআরসি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ওয়ার্ল্ড কনফেডারেশন ফর ফিজিক্যাল থেরাপি এবং বাংলাদেশ সরকারের গেজেট ১৯৮৩ ও ১৯৮৫, সরকারের বর্তমান নির্দেশনা অনুযায়ী অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেশাগত ব্যাচেলর ডিগ্রিপ্রাপ্তরা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এবং সম্পূর্ণ স্বাধীন চিকিৎসা পেশাজীবী। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা স্বাধীনভাবে ফিজিওথেরাপি জনিত রোগীর রোগ বা সমস্যা নির্ণয় করে, স্বাধীনভাবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পরিকল্পনা, প্রদান ও মূল্যায়ন করতে পারবেন। এজন্য কারও অধিনস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে বিচারাধীন রিট পিটিশন নম্বর-১০৯৯৮ অব ২০১১ এর আদেশ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা তাদের নামের আগে ডাক্তার (ডা.) এবং পরে পিটি লিখতে পারবেন। মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল অ্যাক্ট- ২০১০ এদের জন্য প্রযোজ্য নয়। কেননা মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল অ্যাক্ট শুধুমাত্র মেডিকেল ও ডেন্টাল প্রফেশনের চিকিৎসা পেশাজীবীদের জন্য। অন্য প্রেফেশনের চিকিৎসকদের জন্য নয়।

বাতের ব্যথা, হাড়, জোড়া ও মাংসপেশির ব্যথা, ব্যাক পেইন, স্প্যাইন পেইন প্যারালাইসিস, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কিংবা মুভমেন্ট জনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই ধরনের রোগসমূহের চিকিৎসা, পুর্নবাসন এবং প্রতিরোধের জন্য বিজ্ঞান ভিত্তিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও উচ্চ শ্রেণির গবেষণা সু-চিকিৎসা প্রাপ্তির অন্যতম শর্ত। দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা, অসারতাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে বিশ্বব্যাপী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা একটি স্বীকৃত, কার্যকরী ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি। ১৯৯৬ সালে ওয়ার্ল্ড কনফেডারেশন ফর ফিজিক্যাল থেরাপি ৮ সেপ্টেম্বরকে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস পালনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে সক্ষম হবে।’

গত ২০২০ সালে ওয়ার্ল্ড কনফেডারেশন ফর ফিজিক্যাল থেরাপি তাদের নাম পরিবর্তন করে ‘ওয়ার্ল্ড ফিজিওথেরাপি’ নামকরণ করে। ওয়ার্ল্ড ফিজিওথেরাপি একটি বিশ্বব্যাপী সংস্থা এবং এটি আন্তর্জাতিক স্তরে সদস্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করে পেশার উন্নয়নে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ সংস্থার মূল লক্ষ্য হলো সবার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের সর্বাধিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ভিত্তিক ফিজিওথেরাপি অনুশীলন প্রচার ও সমর্থন করা এবং ফিজিওথেরাপি শিক্ষার সর্বোচ্চ সম্ভাব্য মান বিকাশ এবং বিতরণ করা।

ফিজিওথেরাপি গবেষণালব্ধ ও স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি, যা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা বা রোগে সব বয়সী মানুষের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন চিকিৎসা। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব অনেক। বলা হয়ে থাকে অনেক রোগের আসল মেডিসিন এই থেরাপি। অনেক সময় সঠিক ফিজিওথেরাপি দেওয়া হলে অস্ত্রোপচারও লাগে না। অর্থোপেডিক্স, কার্ডিও - পালমোনারি, নিউরোলজি, নিউরো সার্জারি, গাইনোকলজির মতো বহু রোগের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা পুনর্বাসন চিকিৎসায় মানবদেহের কার্যক্ষমতা, শারীরিক সঞ্চালন, চলনব্যাপ্তির নিয়ন্ত্রণ, সর্বোচ্চ শারীরিক ক্ষমতার উন্নতি, ব্যথাজনিত উপসর্গ নিরাময় এবং শারীরিক ব্যধি, অক্ষমতা এবং প্রতিবন্ধীতার চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করে থাকেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা মাস্কুলো-স্কেলেটাল, নিউরোলজিক্যাল, পেডিয়েট্রিক, জেরিয়াট্রিক, কার্ডিওপালমোনারি রোগীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর বাত-ব্যথা বা আঘাতজনিত ব্যথার মতো স্বাস্থ্য সমস্যা নির্ণয় করে পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দেন। দীর্ঘমেয়াদি রোগ, বিশেষ করে বাত-ব্যথা ও পক্ষাঘাতের রোগীদের সমস্যা ওষুধ দিয়ে নিরাময় সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। মাংসপেশি ও হাড়ের সমস্যা, পোড়া রোগী, জন্মগতভাবে যেসব শিশু প্যারালাইসিস বা সেরিব্রাল পালসি ও মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত বা ঘাড়, হাত, পা বেঁকে যাওয়া ঠিক করতে পারে না, হৃদরোগ ও ফুসফুসের সমস্যা, শল্যচিকিৎসা, বার্ধক্যজনিত সমস্যা ও পঙ্গু পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সরকারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নিয়োগের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসম্পন্ন ও কার্যকর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেওয়া যাবে। যথার্থ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে যত্রতত্র নিবন্ধন বিহীন ফিজিওথেরাপি অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শিক্ষায় যুক্ত করে সেবার মান উন্নয়ন করা যেতে পারে।

মো. আবু সালেহ আলমগীর: প্রফেসর ও চেয়ারম্যান, ডিপার্টমেন্ট অব ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড রি-হ্যাবিলিটেশন, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, উত্তরা, ঢাকা