advertisement
advertisement
advertisement.

রেডিওথেরাপিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম

অধ্যাপক ডা. মো. ইয়াকুব আলী
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:০০ এএম
advertisement..

রেডিওথেরাপি এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি, যে মাধ্যমে বিকিরণ রশ্মি ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়। এটি দেওয়া হয়ে থাকে টেলিথেরাপি ও ব্রাকিথেরাপির মাধ্যমে।

টেলিথেরাপি : এটি হলো বিকিরণ রশ্মি, শরীরের বাইরে থেকে নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করা হয়। এখানে রোগীকে সঠিকভাবে অবস্থানের জন্য ইমমোবালাইজেশন ডিভাইসের মাধ্যমে পজিশনিং করানো হয়।

advertisement

ব্রাকিথেরাপি : এটির মাধ্যমে বিকিরণ রশ্মি শরীরের ভেতরে ক্যানসার আক্রান্ত অংশে অ্যাপ্লিকেটরের মাধ্যমে স্থাপন করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

চিকিৎসা : আমাদের দেশে প্রধানত টেলিথেরাপির মাধ্যমে মুখগহ্বর, কন্ঠনালি, গলা, ফুসফুস, স্তন, জরায়ুমুখের ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। কিছুু ক্ষেত্রে জরায়ুমুখে ব্রাকিথেরাপিও করা হয়। রেডিওথেরাপি সম্পর্কে রোগীদের বিভিন্ন ধরনের ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, হাত-পায়ে মেশিনের সাহায্যে তাপ প্রয়োগ করা হয়। ফলে শরীরের চামড়া পুড়ে যায়। কারও ধারণা, হাত-পা বেঁধে মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এতে ক্যানসার রোগের উন্নতি না হয়ে শারীরিক অবনতি ঘটে। এমন ধারণা মোটেও ঠিক নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিতে রেডিওথেরাপি চিকিৎসায়ও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। গামা নাইফ ও সাইবার নাইফ রেডিয়েশন অনকোলজির যুগান্তরকারী টেকনিক হিসেবে ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাতে অপারেশনের প্রয়োজন হয় না।

রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্যান্য ক্যানসার চিকিৎসা পদ্ধতির চেয়ে কম। চিকিৎসার স্থানভেদে পার্শ্বক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। মুখ ও গলার ক্যানসার চিকিৎসার সময় মুখে ঘা, গিলতে ব্যথা, খাওয়ায় অরুচি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সঠিকভাবে অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ, তরল ও নরম খাবার খেলে এ সমস্যা দূর হয় এবং রোগী পুষ্টিহীনতায় ভোগেন না। তাছাড়া রোগীকে মনে রাখতে হবে, চিকিৎসাকালে ওই স্থানে ঘষা, সাবান দিয়ে প্রতিদিন ধুয়ে নিলে চামড়ার ক্ষতি হয় এবং সঠিক সময়ের মধ্যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। কোনো কোনো সময় বিকিরণ রশ্মি আশপাশের স্বাভাবিক কোষের ওপর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ কারণে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। এ জন্য সতর্ক থাকতে হয়।

রোগী যখন ফুসফুস ক্যানসারের জন্য রেডিওথেরাপি গ্রহণ করে, তখন তার কিছু উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়। বমিভাব, খাওয়ায় অনীহা, দুর্বলতা; কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাশি ও সামান্য জ্বর দেখা দিতে পারে, যেটি রেডিয়েশন সিকনেস নামে পরিচিত। এ অবস্থায় রোগীকে এ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের খাবার, পানীয় ও ফলমূল জাতীয় জিনিস বেশি করে খেতে দিতে হবে। নারীদের স্তন ক্যানসারে চেস্টওয়াল ও গলার নিচ অংশে (সুপারক্লেভ এরিয়া) রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ফুসফুস ও বিপরীত দিকের স্তন, গলা ও ট্রাকিয়ায় রেডিয়েশন যেতে পারে। ফলে গিলতে অসুবিধা, কাশি ও জ্বর হয়। এ জন্য চিকিৎসার সময় রোগীকে সঠিকভাবে পজিশনিং করতে হবে। রেডিওথেরাপি চলা অবস্থায় ক্যানসার রোগীকে গোসল করানো যাবে না বা পানি লাগানো যাবে না। এটা অবশ্য কোন ধরনের মেশিন ব্যবহার করা হয়, সেটার ওপর নির্ভর করে। যদি লিনিয়ার এক্সেলেরেটরের সাহায্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তাহলে গোসল করতে বাধা নেই। তবে চিকিৎসার স্থানে সাবান নিয়ে ঘষামাজা করা যাবে না। এসব নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিলে পরবর্তী সময় কোনো অসুবিধা হয় না। পরিশেষে বলা যায়, এ চিকিৎসার সফলতা নির্ভর করে সচেতনতা, সহযোগিতা ও সহনশীলতার ওপর।

লেখক : রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট এবং অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অনকোলজি বিভাগ, এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, সাভার, ঢাকা

চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা

০১৯১৫৭২৮২৬৬; ০১৭৪৫৩৪৯৪১৫