advertisement
advertisement
advertisement

সামাজিক সুরক্ষার অভাব বাল্যবিয়ের অন্যতম কারণ

লাবণ্য লিপি
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৫৩ পিএম
advertisement

বাল্যবিয়ে একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটা সরাসরি কন্যাশিশুদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইউনিসেফের তথ্য মতে, দেশে ৫২ শতাংশ নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সের আগে। আর ১৮ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছর বয়সের আগে। বাল্যবিয়ের কারণ এবং তা প্রতিরোধে উদ্যোগ ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উপপরিচালক, অ্যাডভোকেসি, লেখক ও উন্নয়নকর্মী নিশাত সুলতানা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমান্তরালের বিভাগীয় সম্পাদক লাবণ্য লিপি

advertisement

দেশে ৫২ শতাংশ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এর কারণগুলো কী?

advertisement

বাল্যবিয়ে একটি চলমান সামাজিক সমস্যা। তবে কোভিডকালীন সময়ে বেড়েছে বাল্যবিয়ের হার। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়- দারিদ্র, যৌতুক, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। এই বিষয়গুলো চলমান ছিল এবং আছে। কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র আমাদের জানান দেয়, সামাজিক সুরক্ষার অভাব বাল্যবিয়ের অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে সচেতন জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও। বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে এখনকার মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি জানে। তাই সচেতনতা থাকার পরও কেন মা-বাবা সন্তানকে বাল্যবিয়ের মতো একটি অভিশাপের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যে দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ নারীই বিবাহিত জীবনে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন, সেই দেশের পিতা-মাতার কাছে তার কন্যাশিশুর নিশ্চিত ভবিষ্যৎ হিসেবে বাল্যবিয়ে কোনো আকর্ষণীয় সমাধান হতে পারে না। তার পরও নিরুপায় হয়ে তারা এ সিদ্ধান্তই গ্রহণ করছেন। বাল্যবিয়ের বিকল্প হিসেবে মেয়ের জন্য অন্য কোনো পথের সন্ধান থাকলে হয়তো মা-বাবার বিয়েকেই মেয়ের জন্য একমাত্র ভবিতব্য বলে মনে করতেন না।

কোভিডের সময় থেকে গত তিন বছরে কী পরিমাণ বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে? কোনো পরিসংখ্যান আছে কি?

কোভিডের সময় থেকে গত তিন বছরে কী পরিমাণ বাল্যবিয়ে হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। সরকারি পর্যায়ে এই ধরনের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান থাকা খুব প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এটি আমাদের দুর্ভাগ্য যে, সরকারি পর্যায়ে এই ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০২০ সালের মার্চ থেকে টানা দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে সরকার। মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা ও তথ্য-উপাত্ত বলছে, স্কুল খোলার পর অনেক মেয়েশিক্ষার্থীই আর স্কুলে ফিরে আসেনি। যারা ফিরে আসেনি, তাদের উল্লেখযোগ্য অংশই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে কত মেয়েশিক্ষার্থী স্কুলে আর ফিরে আসেনি, এ বিষয়েও সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি এখনো।

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট কিনা?

সরকারি পর্যায়ে সর্বাগ্রে যা প্রয়োজন ছিল, তা হলো কোভিডকালীন বা কোভিড-পরবর্তী বাল্যবিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়ার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান। এ ক্ষেত্রে সরকারি ইচ্ছার ঘাটতি দেখা গেছে। একটি সমস্যার ভয়বহতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা যতক্ষণ স্পষ্ট না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত উদ্যোগগুলো পর্যাপ্ত ও বাস্তবসম্মত হবে না। সেটি আমাদের ক্ষেত্রেও হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে বাল্যবিয়ে নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। অনেকটা ঢিলেঢালাভাবেই চলেছে বাল্যবিয়েবিরোধী প্রচার-প্রচারণা। সাধারণ সময় আর কোভিড সময়ের মধ্যে বাল্যবিয়ে নিরসনের উদ্যোগে তেমন কোনো দৃশ্যমান তারতম্য ছিল না, এখনো নেই।

প্রচার-প্রচারণায় কোনো পরিবর্তন কি আনা দরকার? হলে সেটি কেমন হবে?

আমাদের প্রচার-প্রচারণা অনেকটাই যেন একটি গ-িতেই আটকে গেছে। তাই প্রচারণার নতুন নতুন কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে। বাল্যবিয়ে এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পুরুষদের সচেতনতা ও তাদের ভূমিকা নিয়ে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে বেশি বেশি কাজ করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে নতুন নতুন কৌশল ভাবতে হবে এবং সেই কৌশলে ছেলেমেয়েদের নির্ধারিত ভূমিকাও স্পষ্ট করতে হবে।