সর্বোচ্চ দশ মাসের মধ্যে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুরু হয় ওসমানি উদ্যানের সংস্কার কাজ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ পার্কটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় গোস্যা নিবারণী পার্ক। ২০১৮ সালে শুরু হয় এর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ। এর
নকশা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। পাঁচ বছর শেষ হলেও নানা জটিলতায় থমকে গেছে সেই কার্যক্রমও।
সংস্কার কাজ শুরুর আগে ওসমানী উদ্যান পার্কে গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে ছিল মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের ম্যাপ ও মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত মিশাইলের স্থাপত্য। গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, হাইকোর্ট, সচিবালয়সহ এসব এলাকায় বিভিন্ন কাজ করতে আসা সাধারণ মানুষের ছায়াতল হিসেবে ব্যবহৃত হতো পার্কটি। বন্ধ থাকায় এখন সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ।
আধুনিকায়ন ও নান্দনিকতার কথা বলে ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি ওসমানী উদ্যান পার্ক সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। পরে মেয়র পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার কাজও থমকে যায়। তবে কাজের অগ্রগতি যাই হোক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দকৃত অর্থের বড় একটা অংশ তুলে নিয়েছে। অবশ্য পরে তাদের চুক্তি বাতিল করে জরিমানা করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রথমে পার্ক সংস্কারে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৮ কোটি টাকা। পরে সেটি বাড়িয়ে ৮৬ কোটি টাকা করা হয়। এর পর আরও কিছু কাজ যুক্ত করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে শতকোটি টাকারও বেশি। এ পার্কের সংস্কার কাজ কবে শেষ হবে, কবে উদ্বোধন হবে এখনো নিশ্চিত করতে পারছে না বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
বর্র্র্তমানে পার্কের চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ভেতরে যেসব নির্মাণসামগ্রী রয়েছে সেগুলোর ভেতরে ঘাস জন্মে বড় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। পুকুরপাড়ে বসার জায়গায়ও তৈরি হয়েছে ঘন জঙ্গল। টিনের বেড়ার অনেক জায়গা ভেঙে ভেতরে ভাসমান মাদকসেবীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ পার্ক মাদকসেবীদের আশ্রয়স্থল হবে এটি মেনেই নিতে পারছেন না নগর পরিকল্পনাবিদরা।
তারা মনে করেন উন্নয়নের নামে ইট, পাথরের প্রাচীর করে পার্কের সৌন্দর্য ধ্বংস করা হচ্ছে। তারা বলছেন, জনগণের পার্ক হলেও জনমানুষের মতামতকে প্রাধান্য দেয়নি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘গোস্যা নিবারণী পার্ক নাম দিয়ে যে ধরনের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে, সেটা পরিবেশের সঙ্গে একদমই অন্যায্য। প্রাকৃতিক পরিবেশ বাদ দিয়ে কংক্রিটের উপাদান দিয়ে পার্কের মূল ফোকাস ধ্বংস করার পরিকল্পনা ছিল। যার কারণে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করেছে ডিএসসিসি। নকশা নবায়নের নামে প্রচুর ব্যয়বহুল উপাদান যোগ করা হচ্ছে সেখানে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যেটা তারা করতে চাচ্ছে সেটি পার্র্ক এবং উদ্যানের মূল ফোকাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, জানা গেছে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় পূর্বের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘দি বিল্ডার্স লিমিটেড’কে কোটি টাকার ওপরে জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফজলুল করিম চৌধুরী (স্বপন চৌধুরী)। তিনি ক্যাসিনো কা-ের ধরপাকড়ের মধ্যে দেশ থেকে পালিয়ে যান। পরে আর দেশে ফেরেননি।
জানা গেছে, দি বিল্ডার্স লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। এখন নতুন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। এর আগে বর্তমান মেয়র ব্যরিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এর সভাপতিত্বে একটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেই ঠিকাদারের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে, কবে বিজ্ঞপ্তি যাবে, কবে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। তবে জানা গেছে সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন ঠিকাদার নিয়োগ হতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ আমাদের সময়কে বলেন, পূর্বে নিয়োগকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কাজ করেনি। তাই তাদের চুক্তি বাতিল করে তাদের সারাজীবনের জন্য ডিএসসিসির কাজ পাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
নতুন ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটু তো বাড়বেই। যেহেতু তখন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা ছিল। আর এখন ২০২১-২০২২ অর্থবছর চলছে। কাজেই ব্যয় একটু বাড়তেই পারে।