বাংলাদেশি অভিবাসীরা ধর্মীয় উগ্রবাদে জড়িত নয়। তবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবাসী রাজনৈতিক ও সহিংসতার চিন্তা থেকে তাদের কষ্টার্জিত আয়ের একটা অংশ ধর্মীয় বিভিন্ন দলকে দিচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘উগ্রবাদ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন : বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিতে এর বাস্তবতা’ শীর্ষক এক গবেষণায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ৪০০ অভিবাসীর ওপর জরিপ চালিয়ে এ ফল পাওয়া গেছে। ব্র্যাকের সহযোগিতায় গবেষণাটি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাহাব এনাম খান গবেষণা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উগ্রবাদ থেকে দূরে থাকে বাংলাদেশি প্রবাসীরা। এর কারণ হিসেবে উঠে আসে বাংলাদেশিদের দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন, দায়িত্ববোধ ও সমাজব্যবস্থা। বিদেশে অবস্থানকালীন অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার অভাব, শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব, তুলনামূলক কম মজুরি, অসদাচরণ, প্রযুক্তি ও যোগাযোগ মাধ্যমের যথাযথ ব্যবহার না করা অভিবাসীদের উগ্রবাদে প্রভাবিত করতে পারে।
এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ভিবাসীদের গন্তব্য দেশগুলোর নিয়মকানুন, সংস্কৃতি, ইত্যাদি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা প্রদান, বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর নিয়মিত অভিবাসীদের খোঁজখবর রাখা, প্রযুক্তিগত এবং কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার ওপর আরও বেশি গুরুত্ব¡ দেওয়া, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রদান, অনলাইনের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করা,
পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, পুনরেকত্রীকরণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রদানসহ উগ্রবাদী মতবাদ সম্পর্কে আরও গবেষণা ও করণীয় নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।
তিনি বলেন, জরিপে অংশ নেওয়া ৮৯ শতাংশ উত্তরদাতা নিজের বাঙালি সত্ত্বা নিয়ে গর্ববোধ করেন। আর ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবাসী দাতব্যভিত্তিক কাজে অর্থ ব্যয় করেন। ৪১ দশমিক উত্তরদাতা মনে করেন রাজনীতিবিদেরা সমাজকে আরও ভালোভাবে পরিবর্তন করতে পারেন। ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ মনে করেন তরুণ ও যুবক রাজনীতিবিদেরা দেশের ভালো পরিবর্তন আনতে পারেন। প্রবাসীদের ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় জ্ঞান বিনিময় (শেয়ার) করেন। আর ৪ শতাংশ প্রবাসী ধর্মীয় নানা জানা ও প্রচার প্রচারণার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) উপপরিচালক জহুরা মনসুর, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের উপকশিনার মুহাম্মদ হাবিবুন নবী আনিসুর রশীদ, জনশক্তি প্রেরণকারী এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান, ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়া পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান; কনস্যুলেট অব দ্য রিপাবলিক অব সিঙ্গাপুর, ঢাকার হেড অব মিশন শিলা পিল্লাই; বিএমইটির উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম; ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নুরুল কাদের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।