৭ দিনের রিমান্ডে রাফি
আদালত এলাকা থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রধান সমন্বয়ের ভূমিকায় ছিলেন গ্রেপ্তার মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, পলাতক শীর্ষ জঙ্গি মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার ঘনিষ্ঠ আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে শামসকে ছিনিয়ে নেওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
এদিকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার রাফির ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন রিমান্ডের আদেশ দেন। আদালতে মেহেদী বলেন, ‘ব্লগার নাজিমুদ্দিন হত্যা মামলায় আমি জামিনে ছিলাম। ওই মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে এসেছিলাম। আমি জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানি না। অথচ আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
কিন্তু সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন রাফি। এ জন্য এক মাস ধরে পরিকল্পনা হয়। কবে কীভাবে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়া হবে, সেটির পরিকল্পনা আদালতে হাজিরা দিতে আসা মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জঙ্গিদের জানিয়ে আসতেন রাফি। ২০ নভেম্বর ঘটনার দিনও হাজিরা দিতে রাফি আদালতে যান এবং ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা পৌঁছে দেন।
সিটিটিসি বলছে, তারা ৪ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু দুজনকে নিতে সক্ষম হয়। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল মেজর জিয়ার ঘনিষ্ঠ আরাফাতকে ছিনিয়ে নেওয়ার। কিন্তু পালানোর সময় পুলিশ আরাফাতকে ধরে ফেলে।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ের মামলায় রাফি এজাহারনামীয় আসামি। ২০১৩ সাল থেকে তিনি আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে হিজবুত তাহরীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সরকারবিরোধী অপতৎপরতার কারণে ২০১০ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১১ সালে জামিনে বের হয়ে ২০১৩ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। তখন সংগঠনের নাম ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)।
আসাদুজ্জামান বলেন, অল্প দিনের মধ্যে দক্ষ নেতৃত্বের কারণে রাফিকে আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের দাওয়া বিভাগের প্রধান করা হয়। সংগঠনের নিবেদিতপ্রাণ ও অতি সাহসী কর্মী হিসেবে তিনি মেজর জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর রাফিকে সংগঠনের আসকারি বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি মাইনুল হাসান শামীমকেও আসকারি বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয় উল্লেখ করে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০১৬ সালে যখন ব্লগার হত্যাসহ বেশ কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়, তখন সিটিটিসি অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর-বাড্ডা এলাকায় তাদের আস্তানা পায়। সে সময় রাফিকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, সেদিন আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য ১২ জঙ্গিকে আনা হয়। সেখান থেকে ৪ জনকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল। বিষয়টি ৪ জঙ্গিই জানতেন। তাদের প্রধান নিশানা ছিল আরাফাত ও শামীম। শামীমকে ছিনিয়ে নিতে পারলেও আরাফাতকে পারেনি।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম কাট-আউট পদ্ধতিতে তাদের অপারেশন সম্পন্ন করে। তারা অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রাখে। ছিনতাইয়ের বিষয়টি চার জঙ্গিই জানতেন। এর বাইরে আর কেউ জানতেন কিনা, আমরা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’
জামিনে থাকা জঙ্গিদের ওপর নজরদারির বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘তারা ঘরে বসেও অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে পারে। আমরা কিছু দিন আগে দুজন ডাক্তারকে ধরেছি, যারা প্রতিদিন স্বাভাবিক কাজকর্মের মধ্যেই বিভিন্ন এনক্রিপটেড অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।’
গত রবিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গি সোহেল ও শামীমকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।