স্বামী-স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ মোট পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের কর্তাব্যক্তির হাতে যদি সংসারের যাবতীয় ব্যয়নির্বাহের জন্য মাসে সাকুল্যে ১২ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়, তবে তার কাছে মনে হতে পারে অথৈ সাগরে পড়েছেন। পণ্যমূল্যের ক্রম ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে এ পরিমাণ টাকায় তিনবেলা অন্নসংস্থান করাই দুরূহ হয়ে পড়বে। তদুপরি বাসাভাড়া, সন্তানদের পড়ালেখা ছাড়াও সংসারে ব্যয়ের আরও কত যে খাত! এ যেন দেড়হাত কাঁথায় সাড়ে তিন হাত শরীর আবৃত করা! এমন পরিবারের কর্তা যদি বলেন সপরিবারে মালদ্বীপে বেড়াতে যাবেন, তবে নিশ্চয় ভিড়মি খাওয়ার কথা। অনেকে একটিমাত্র শব্দে প্রতিক্রিয়া জানাবেন- ‘অসম্ভব’; কিন্তু না। অসম্ভব নয় বরং খুবই সম্ভব। সে কথায় আসা যাক।
তার নাম মো. আবদুল জলিল। পেশায় নিরাপত্তা প্রহরী। কর্মরত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রেনিং সেন্টারে। তার বেতন ১২ হাজার ৭০০ টাকা। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে তিনি ভ্রমণে যেতে চান মালদ্বীপ। বিষয়টি উল্লেখ করে
অফিসে ছুটিও চেয়েছেন; কিন্তু তার এ বিলাসভ্রমণে বাদ সেধেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। মালদ্বীপে সপরিবারে সফরের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, সেই অর্থের উৎস কী, তা জানতে চেয়ে তাকে উল্টো চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বেবিচকের চিঠিতে বলা হয়, নিরাপত্তা প্রহরী আবদুল জলিল দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের জন্য স্ত্রী, দুই কন্যা ও পুত্রসহ বহিঃ বাংলাদেশ (মালদ্বীপ) ভ্রমণে ৫ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটির আবেদন করেন। অর্জিত ছুটি মঞ্জুরিসহ মালদ্বীপ ভ্রমণের অনুমতি চেয়েছেন তিনি। সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী পদে তিনি ১২ হাজার ৭০০ টাকা মূলবেতনে কর্মরত। পর্যালোচনা করে দেখা যায়- বেতনের এ আয় দিয়ে স্ত্রী, পুত্র ও দুই কন্যাসহ ৫ জনের পরিবারের যাবতীয় ব্যয়নির্বাহের পর পরিবারসহ মালদ্বীপ ভ্রমণের অর্থ কীভাবে তিনি সংকুলান করবেন, তা বোধগম্য নয়। এমতাবস্থায় প্রাপ্য বেতনে স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ ৫ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের মালদ্বীপ ভ্রমণে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় নির্বাহ করা হবে কীভাবে- তা জরুরি ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে।
বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতনের এক কর্মচারী সংসার চালাতেই হিমশিম খাওয়ার কথা। সেখানে লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে ভ্রমণ সন্দেহের সৃষ্টি করে। তাই তার টাকার উৎস কী, সেটা জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তার তরফ থেকে ব্যাখ্যা পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।